ইসলামে বিনোদনের হুকুম


ইসলামে বিনোদনের হুকুম: ১ম পর্ব
   
     অপসংস্কৃতি বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে লিখতে গেলেই সমাজের একটি অংশ থেকে প্রতিবাদ  আসে। আসে প্রগতি বিরোধী, প্রাচীনপন্থী, ক্ষ্যাতসহ নানা খেতাব। গ্রাম বাংলার আপামর জনতা যখন বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের বক্তব্যে দ্বিধান্বিত হয়ে সত্য জানতে চান, তখন আর নিজেকে গুটিয়ে রাখা সম্ভব হয় না। অপসংস্কৃতির বিপক্ষে কথা বলতে গেলে প্রাসঙ্গিকভাবেই এ বিষয়টি এসে পরে যে,  ইসলামে কি বিনোদনের কোনো সুযোগ নেই?  ইসলাম ধর্মে বিনোদনের ব্যাপারে কি রায়, সে বিষয়ে আলোচনার পূর্বে সংস্কৃতি কাকে বলে এবং বিনোদন কি তা সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করা প্রয়োজন। তাহলে ইসলামে সংস্কৃতি এবং বিনোদনের সর্ম্পকটিও সহজভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হবে।

         সহজ র্অথে সংস্কৃতি হচ্ছে: একটি জাতির র্দীঘদিনের জীবনাচরনের ভেতর দিয়ে যে মানবিক মূল্যবোধ; সুন্দরের পথে কল্যাণের পথে এগিয়ে চলে তাই সংস্কৃতি। র্ববরতা ও উগ্রতা পরিহারর করে ভদ্র হয়। বিভিন্ন আচার-আচারণ, নিয়ম কানুন, বিশ্বাস ও রীতি সব কিছুই সংস্কৃতির অর্ন্তভূক্ত। একটি জাতির সংস্কৃতি বলতে বুঝায়; সামগ্রকিভাবে অবশ্যই তার অস্তিত্ব ঐ জাতির সত্ত্বার মধ্যে থাকতে হবে। সামান্য খণ্ডকালীন বা ছোটখাট কোন সংঘবদ্ধ কমিউনিটির আচার-প্রথাকে পুরো জাতির সংস্কৃতি হিসেবে চালিয়ে দেয়া মোটেও ঠিক হবে না। কারো মতে, সংস্কৃতি হচ্ছে এমন বিষয়, যা মানুষের মন ও মননকে সুসভ্য করে গড়ে তোলে।
  
      আর বিনোদন বলতে আমরা বুঝে থাকি যে, এমন ক্রিয়া-কলাপ; যা মানুষকে আনন্দিত করে,  প্রশান্তি এনে দেয়। অবসাদকে পেছনে ফেলে স্বচ্ছ ও প্রশান্ত হৃদয়ে নব উদ্যমে সত্য ও সুন্দরের পথে এগিয়ে  যেতে বিনোদন মানুষকে সহযোগতিা করে।
   
উপরোক্ত সংজ্ঞানুসারে আমরা যদি সংস্কৃতি ও বিনোদনকে পাশাপাশি রেখে বিবেচনাচেনা করি তাহলে বিষয়টি এমন দাঁড়ায় যে, ‘সাংস্কৃতকি বিনোদন’ ।  আর এটা হবে এমন কিছু মৌলিক র্কমকান্ড, যা কিছু সুন্দর ক্রিয়া-কলাপের মাধ্যমে মানুষের আত্মাকে প্রশান্তি দয়িে তাকে সুসভ্য ও ভদ্র হতে সহযোগিতা করবে। ক্লান্তি আর অবসাদকে খুবই সাবলীলভাবে ব্যক্তির অজান্তেেই দূরে সরিয়ে  দিবে এবং শরীর ও মন উভয়কইে এক অনাবিল, অর্পাথিব শান্তি এনে দিবে।
  
     আর যদি আমাদের এই ‘সাংস্কৃতকি বিনোদন’ এর সংজ্ঞায় আত্ম উপলব্ধি ভুল না হয়ে থাকে এবং রূহ বা আত্মার মাধ্যমেই কেবল প্রকৃত প্রশান্তি আর অনাবিল স্বস্তি র্অজন করা সম্ভব, আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে, সংস্কৃতি ও বিনোদনের মূল উৎসই হচ্ছে ইসলাম। ইসলাম ধর্ম ছাড়া বা ইসলাম সর্মথিত পন্থা ও পদ্ধতি ছাড়া, সংস্কৃতি ও বিনোদন বলতে এ পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। ইসলাম অসর্মথিত ও বিরুদ্ধে কোনো পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার র্কাযকলাপকেই সংস্কৃতি কিংবা বিনোদন বলে প্রচার করার চেষ্টা হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তা চূড়ান্ত র্পযায়ের অসভ্যতা, অভদ্রতা আর অপসংস্কৃতির আখড়া ছাড়া কিছুই নয়।
  

আরও পড়ুন:


তাওবার শর্তাবলী


মানব অন্তর যখন কালিমযুক্ত হয়ে যায়, দুনিয়ার প্রাচুর্যের মোহ ও প্রবৃত্তির চাহিদা যখন নফসকে দূর্বল করে ফেলে। শত পাপের শৃঙ্খলে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে মানুষ। হতাশা আর গ্লাণি যখন তাকে পেয়ে বসে,এই পাপ রাশি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে তখন তওবার হাত তোলে। আর মহান আল্লাহ তাকে মার্জনা করে রহমতের দ্বারা আবদ্ধ করে নেন। আর আল্লাহ হলেন গফুরুর রাহিম, ক্ষমাশীল,দয়ালু। প্রত্যেক মানুষের প্রতি রয়েছে আল্লাহ তায়ালার সীমাহীন দয়া। শিরক ছাড়া মানুষ অতি জঘন্য ও ছোট-বড় যত অপরাধই করুক না কেন, আল্লাহর কাছে তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তার সব পাপ ক্ষমা করে তাকে আপন করে নেন। হাদীসে এসেছে: 

التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ

গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাকারী ব্যক্তি নিষ্পাপ ব্যক্তির মত।[1]

   فتح الباري  কিতাবে আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী র. উল্লেখ করেন

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক  (র.) থেকে তাওবার শর্তের ব্যাপারে অতিরিক্ত বর্ণনা রয়েছে। তিনি বলেন : গুণাহের জন্য লজ্জিত হওয়া। পুনরায় পাপের দিকে ফিরে না যাওয়ার সংকল্প করা। অত্যাচারিত বা অন্যায়ভাবে আদায়কৃত জিনিস ফিরিয়ে দেওয়া। ফরয বিধানসমূহ থেকে যা নষ্ট করা হয়েছে তা আদায় করা। হারামের মাধ্যমে শরীরের যে বৃদ্ধি হয়েছে তাকে দুঃখ ও বিষন্নতার ( অনুতাপ) দ্বারা নিঃশেষ করে দিতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত পবিত্র না হয়। শরীরকে আনুগত্যের কষ্ট ও যন্ত্রণা আস্বাদন করাতে হবে যেমনিভাবে তাকে পাপের স্বাদ দেওয়া হয়েছে।2]

ইসলামিক উপন্যাস সমগ্র: ফ্রি ডাউনলোড


  1. মুসলমানের হাসি.pdf
  2. লৌহ মানব.pdf
  3. সীমান্ত খুলে দাও.pdf
  4. তারিক বিন যিয়াদ.pdf
  5. শয়তানের বেহেশত - ১.pdf
  6. শয়তানের বেহেশত - ২.pdf
  7. শত্রুদেশে মুসলিম গোয়েন্দা - ১.pdf
  8. শত্রু দেশে মুসলিম গোয়েন্দা - ২.pdf
  9. বাগদাদের ঈগল - ১.pdf
  10. বাগদাদের ঈগল - ২.pdf
  11. বদর প্রান্তর.pdf
  12. প্রেম যুদ্ধ.pdf
  13. দামেস্কের কারাগারে.pdf
  14. কাশ্মির বীরাঙ্গনা.pdf
  15. কাল নাগিণী.pdf
  16. আফ্রিকার দুলহান.pdf
  17. আগুনের কারাগার.pdf
★নসীম হিজাযীর আসল নাম ছিলো শরীফ হুসাইন। নসীম হিজাযী ছদ্মনামে তিনি লেখালেখি করতেন। ১৯১৪ খৃস্টাব্দে পাঞ্জাব জেলার গুরুদাসপুরে শরীফ হুসাইন জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলে তিনি পরিবারের সাথে পাকিস্তানে চলে আসেন। লাহোরে বসবাসরত অবস্থায় ১৯৯৬ সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।

★বিখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট, ঔপন্যাসিক এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ ১ নভেম্বর ১৯২০ খৃস্টাব্দে (স্বাধীনতাপূর্ব) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের এক রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ খৃস্টাব্দের ১৬ ই নভেম্বর ৭৯ বছর বয়সে তিনি লাহোরে ইন্তেকাল করেন।

বই পড়ার উপকারিতা:

পড়া শোনা কষ্ট দূর করে
তুমি যদি কষ্টে থাকো তাহলে কিভাবে সময়গুলো অতিবাহিত করবে?গান শুনে? না হেটে? সাসেক্স বিশ^বিদ্যালয়ের এক গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পড়া শোনা করে আপনি এই সময়টা অতিবাহিত করতে পারেন। তারা দেখিয়েছেন যে, গান শুনা, হাটা, চা পান করার চেয়ে পড়া শোনা করাই এ ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।
অনিদ্রা হতে মুক্তি পেেত সাহায্য করে
শান্ত হওয়া ও একটা সুন্দর রাতের ঘুমের জন্য পড়া শোনা সব চেয়ে বিশি কার্যকরী একটি পন্থা। ্উজ্জল আলো ও টেলিভিশনের স্কিনের আলো তোমার মস্তিষ্কে এই বার্তা পাটিয়ে দেয় যে, ঘুম হতে উঠার সময় হয়ে গেছে। আর হালকা আলোয় আপনার পছন্দের বইটি পড়া এর বিপরীত প্রভাব ফেলে বার্তা দেয় যে, এটিই আপনার বিশ্রামের উপযুক্ত সময়।
 স্মৃতি ও চিন্তা শক্তিকে উন্নত করে
প্রত্যেক সময় পড়া মানে আপনার মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষণ দেয়া। যখন আপনি একগুচ্ছ নতুন শব্দের মুখোমুখি হন তখন অর্থ বের করেন এবং তা আপনার স্বল্প মেয়াদী স্মৃতিতে সংরক্ষণ করেন।


 জীবনের লক্ষ্যে এবং কঠিন কিছু জয় করতে উৎসাহিত করে
ওহিও স্টেট বিশ^বিদ্যালয়ের একদল গবেষক দাবি করেন যে, যত পড়িবে ততই নিজেকে নিজের চরিত্র দিয়ে তাদের মাঝে নিজেকে চিহ্নিত করতে পারিবে। ভালো পড়া শোনা আপনার জীবনে ভালবাসা ও জীবনের লক্ষ্য খুজতে প্রয়োজন একসেট ভালো বই অনুসরণ করা।


⇘আরও ডাউনলোড করুন:

তাকদীরে বিশ্বাস

     মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তােমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে; এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।[১]

     মহানবী (দ.) ইরশাদ করেন:
كَتَبَ اللَّهُ مقادير الْخَلَائق قبل أَن يخلق السَّمَوَات وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
আল্লাহ সকল সৃষ্টির তাকদীর আসমান ও জমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে লিখে রেখেছেন।[২]

     হাদীসে আরও এসেছে:
আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টিকুলের মধ্যে প্রত্যেক বান্দার পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে চুড়ান্ত ফয়সালা করে রেখেছেন। তার মৃত্যুর তথা বয়স, তার কর্মকান্ড, তার থাকার স্থান বা মৃত্যুর স্থান, তার চলাফেরা এবং তার রিযিক।[3] 

     তাকদীর (تقدير) আরবী শব্দ। যার শাব্দিক অর্থ হলো - নিয়তি, ভাগ্য, অদৃষ্ট, নসিব।[৪]  আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য যা কিছু নির্ধারণ করেছেন। মহান আল্লাহ কর্তৃক তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকে তাঁর সীমারেখার সাথে সীমাবদ্ধ করা।

সময়ের মূল্য যারা বুঝতেন

     by Md. Habibur Rahman


       মহানবী (দ.) ইরশাদ করেছেন

مَا مِنْ يَوْمٍ طَلَعَتْ شَمْسُهُ إِلَّا يَقُولُ: مَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَعْمَلَ فِيَّ خَيْرًا فَلْيَفْعَلْ؛ فَإِنِّي غَيْرُ مَرْدُودٍ عَلَيْكُمْ
যখনই কোনদিনের‌ সূর্য উদিত হয়, তখন সে দিন বলে: যে আমার (নির্ধারিত সময়ের) ভিতর কোন কল্যাণকর্ম করতে পারে সে যেন তা করে নেয়। কেননা, আমাকে (এ সময়কে) আর তোমাদের নিকট পুণরায় পাঠানো হবে না।[1]

       হাদীসে আর এসেছে:
لَا تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ، وَعَنْ عِلْمِهِ مَا فَعَلَ بِهِ، وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ، وَفِيمَا أَنْفَقَهُ، وَعَنْ جِسْمِهِ، فِيمَا أَبْلَاهُ
কিয়ামতের দিন চারটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ব্যতিত কোন মানুষই তার পদদ্বয় সামনে বাড়াতে পারবেন না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, তা কিসে শেষ করেছে। তার জ্ঞান সম্পর্কে, তা কোন কাজে ব্যয় করেছে। তার সম্পদ সম্পর্কে; তা সে কিভাবে অর্জন করেছে এবং ব্যয় করেছে। তার যৌবন সম্পর্কে তা কিসে ক্ষয় করেছে।[2]

      এটি সর্বজন স্বীকৃত নীতিবাক্য যে, ‘সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা।’ মানুষের জীবনকাল সীমিত; এই সীমিত কালে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। তাই প্রতিটি মুহূর্ত খুবই মূল্যবান। এই মূল্যবান সময়কে যথাযথ ভাবে কাজে না লাগিয়ে হেলায় অতিবাহিত করলে জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ক্ষতির জন্য আফসোস করা যায়; কিন্তু সেই সময়কে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। কোন পার্থিব সম্পদের মানদন্ডে সময়কে নিরুপন করা সম্ভব নয়। প্রকৃত বুদ্ধিমান তো সে-ই, যে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পূর্ণ দৃঢ়তা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ভবিষ্যতের পথে চলে। এক-একটি মুহূর্ত হিসাব করে খরচ করে আর সময়কে অধিক থেকে অধিকতর ফলপ্রসূ  করতে সচেষ্ট হয়। বোকা তো সেই, যে অতীতের নষ্ট হওয়অ সময় নিয়ে আফসোস করে। 

      আল্লাম ইবনুল জাওযী (র.) তদ্বীয় কিতাব مدارج السالكين বলেন:

الاشتغال بالندم على الوقت الفائت تضييع للوقت الحاضر

হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সময়ের জন্য অনুশোচনা – অনুতাপে লিপ্ত হওয়া তো বর্তমান সময়কে নষ্ট করা।[3]

      সময়ের মূল্য যারা বুঝতেন:

  🔯ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান শায়বানী (র.)। তিনি ইমাম আবু হানিফা (র.) এর অন্যতম প্রসিদ্ধ ছাত্র ছিলেন। ইলম অন্বেষণের জন্য তিনি রাতে খুব অল্প সময় ঘুমাতেন। সব সময় বিভিন্ন কিতাব কাছে রাখতেন। যখন একটি বিষয় পড়তে পড়তে একগেয়েমি বোধ করতেন তখন অন্য বিষয় পড়তেন। আর তিনি চোখে পানি ছিটিয়ে ঘুম দুর করতেন। তিনি বলতেন: إن النوم من الحرارة ঘুম তো উষ্ণতা থেকেই আসে। তাই শীতলতার মাধ্যমেই তাকে প্রতিহত করতে হয়।[4]

  🔯আমর ইকনে বাহর (র.)। তাঁর হাতে যখনই কোন কিতাব আসতো (তা যে কোন বিষয়েরই হোক না কেন) তা শুরু থেকে শেষ পযন্ত পড়ে ফেলতেন। এক সময় যখন তিনি মনের চাহিদা পূরণের জন্য সহজে কোন কিতাব পাচ্ছিলেন না, তখন অর্থের বিনিময়ে কয়েকটি লাইব্রেরীর সাথে চুক্তি করেন এবং দিন রাত সেখানে পড়ে থেকে কিতাব অধ্যয়ন করতে থাকেন।[5]

      একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা:
জনৈক ব্যক্তি কোথাও একটি অতি মূল্যবান হীরকখন্ড পেল।  সে তা নিয়ে এক জহুরীর নিকট গেল এবং হীরকখন্ডটি সম্পর্কে জানতে চাইল। জহুরী তাকে বলল, এর প্রকৃত মূল্য তখনই হবে যখন এর উপর কারুকার্য খচিত হবে। তবে এ কাজ অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর। এর জন্য মোটা অংকের পারিশ্রমিকও গুণতে হয়। লোকটি জহুরীর কথায় হীরার মূল্য উপলব্ধি করতে পারল এবং এ কাজের জন্য যে কোনো পারিশ্রমিক দিতে রাজি হয়ে গেল। জহুরীকে সাথে করে নিজের বাড়ি নিয়ে এল। জহুরীর একটি গুণ এই ছিল যে, সে গানও জানত। কথাবার্তার এক ফাঁকে লোকটি তাকে একটি গান শোনানোর আবেদন করল। জহুরী একটি গানের সুর ধরে গাইতে শুরু করল। এদিকে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। গান শেষ করে জহুরী বলল, আমার পারিশ্রমিক দিন, আমার সময় পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এ কথা শুনে লোকটি অবাক-বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলল, কীসের পারিশ্রমিক? আপনি তো এখনও হীরকখন্ডটি স্পর্শই করেননি! এবার জহুরী বললআরে, মূল্য তো সময়ের হয়। আর আমি তা দিয়েছি। সুতরাং আপনাকে এখন তার মূল্য দিতে হবে। ফলে বাধ্য হয়েই তাকে এর পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হল।[6]

       সময়ই তো জীবন:

       🔯উসতাজ হাসানুল বান্নাহ (র.) বলেন:

من عرف حق الوقت، فقد أدرك الحياة، فالوقت هو الحياة.

বলা হয়ে থাকে যে, সময় হলো স্বর্ণখন্ড কিংবা অমূল্য রতন। কিন্তু কথাটি তাদের জন্য যারা বস্তুগত মূল্য ছাড়া কোনকিছুকে মূল্যায়ন করতে জানে না। তবে, যাদের দৃষ্টি এর চেয়েও দূরে, এর চেয়েও ভিন্ন তাদের উদ্দেশ্যে বলা যায়: সময় তো তোমার জীবনকাল ছাড়া আর কিছু নয়![7]



আরও পড়ুন:

গুণাহ করার পর করণীয়।




[1] আবু বকর আল বায়হাকী, আহমদ ইবনে হুসাইন র., ওফাত:৪৫৮ হিঃ, شعب الإيمان ৫ম খন্ড/ পৃ:৩৬৫, হাদীস নং ৩৫৫৮।
[2] আবু ঈসা আত তিরমিজী, মুহাম্মদ ইবনে ঈসা র., ওফাত;২৭৯ হিঃ, الجامع الكبير ৪র্থ খন্ড, হাদীস নং ২৪১৭।
[3] শায়খ আব্দুল ফাতাহ, আবু গুদ্দাহ র., قيمة الزمن عند العلماء পৃ: ২৪।
[4] قيمة الزمن عند العلماء পৃ: ৩১
[5] প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৯।
[6] মাসিক আল কাউসার, (জুমাদাল উলা, মে ২০০৮ সংখ্যা)
[7] ময়ের মূল্য যারা বুঝতেন, পৃ:১২৫।

গুণাহ করার পর করণীয়





    যদি তাওবাকারী তাওবা করার পর পুনরায় গুণাহে লিপ্ত হয় অথবা ভুলে পাপ কাজ করে ফেলে, তার করণীয় কি? কেননা, কু-প্রবৃত্তি মানুষের মজ্জাগত একটি উপাদান। এ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর মানুষ পাপ করবে বলেই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ার আধার। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

لَوْ أَنَّكُمْ لَمْ تَكُنْ لَكُمْ ذُنُوبٌ يَغْفِرُهَا اللَّهُ لَكُمْ لَجَاءَ اللَّهُ بِقَوْمٍ لَهُمْ ذُنُوبٌ يَغْفِرُهَا لَهُمْ

    'যদি তোমরা গোনাহ করে আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে তাওবা-ইস্তগিফার না করতে তবে আল্লাহ তাআলা এমন এক মাখলুক সৃষ্টি করতনে, যারা গোনাহ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা করতো, তখন আল্লাহ তাআলা তাদরেকে ক্ষমা করতনে।'[১]

    এহেন পরিস্থিতিতে তাওবাকারীর করণী সর্ম্পকে ইমাম গাযালী (র.) বলেন:
أن الواجب عليه التوبة والندم والاشتغال بالتكفير بحسنة تضاده
'যদি তাওবাকারী গুনাহ করে ফেলে, তবে তার ওপর দুটি বিষয় ওয়াজিব বা আবশ্যক। 
প্রথমত: সে তাওবা ও অনুতাপ করবে। 
দ্বিতীয়ত: এ গুণাহকে মিটিয়ে ফেলার জন্য তার বিপরীতে কোন পূন্যকাজ করবে।'[২]

ইসলামিক উপন্যাস কালেকশন: এখনই ফ্রি ডাউনলোড করুন

ইসলামিক উপন্যাস 

  1. স্পেনের রুপসী কন্যা - ১
  2. স্পেনের রুপসী কন্যা - ২
 রডারিক নামক নরপশুর হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য জুলিয়ান মূসা ইবন নুসাইরকে স্পেন আক্রমণের সাদর আমন্ত্রণ জানান। এবার সেনাপতি মূসা বিন নুসাইর প্রথমে পরীক্ষামূলক অভিযানের জন্য তারিফ বিন মালিককে চারশ’ পদাতিক এবং একশ’ অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে স্পেনের আলজিসিরাসে সফল অভিযান চালান। তারিফের এই সফল অভিযানের সংবাদ পেয়ে মূসা বিন নুসাইরের সহকারী সেনাধ্যক্ষ তারিক ইবনু যিয়াদ সাত হাযার সৈন্য সমন্বয়ে গঠিত এক মুজাহিদ বাহিনী অতি সফলতার সাথে ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর সংযোগকারী প্রণালিটি অতিক্রম করে ৯২ হিজরীর রজব অথবা শা‘বান মোতাবেক ৭১১ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল অথবা মে মাসে স্পেন ভূখন্ডে অবতরণ করেন। যে পাহাড়ের পাদদেশে তারিক অবতরণ করেছিলেন তার নামকরণ করা হয় ‘জাবালুত তারিক’ (Gibralter)।
এ সংবাদ স্পেনের শাসনকর্তা রডারিকের কর্ণগোচর হওয়া মাত্র তিনি যথাসাধ্য প্রস্ত্ততি নিলেন আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য। অন্যদিকে সেনাপতি তারিকও তাঁর অভিযানকে স্পেনের মূল ভূখন্ডের দিকে পরিচালনা করলে সেনাধ্যক্ষ মূসা পাঁচ হাযার সৈন্য প্রেরণ করেন। সর্বমোট ১২০০০ সৈন্যসহ সেনাপতি তারিক অগ্রসর হন। ১৯ জুলাই ৭১১ খ্রীষ্টাব্দে মুসলিম বাহিনী এবং গথিক রাজা রডারিকের নিয়মিত বাহিনীর মধ্যে ওয়াদী লাজু নামক স্থানে এক তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে গথিক বাহিনী ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পলায়ন করে। হাযার হাযার গথিক সৈন্য মৃত্যুবরণ করে। রডারিক উপায়ান্তর না দেখে পলায়ন করতে গিয়ে নদীবক্ষে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ হারান। তারিক আরো অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি মুসলিম বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে এই ভাষণ দেন যে, ‘তোমাদের সম্মুখে শত্রুদল এবং পিছনে বিশাল বারিধি। তাই আল্লাহ্র কসম করে বলছি, যে কোন পরিস্থিতিতে ধৈর্যধারণ ও অবিচল থাকা এবং আল্লাহ্র সাথে কৃত ওয়াদা বাস্তবায়ন করা ব্যতীত তোমাদের বিকল্প কোন পথ নেই’। সৈনিকগণও সেনাপতির ভাষণের জবাব দেয়, জয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। কারণ আমরা সত্য প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
মুসলিম সৈনিকদের প্রচন্ড আক্রমণের ফলে গথিক রাজ্যের একটির পর একটি শহরের পতন হ’তে থাকে। ৭১১ খ্রীষ্টাব্দের অক্টোবরে মুসলমানরা কর্ডোভা জয় করেন। মুসলমানরা স্পেন জয় করার পর প্রথমে সেভিল (Seville) কে রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন।
  1. প্রথম পরিবার.pdf
  2. মানুষ ও দেবতা.pdf
  3. প্রথম দিনের সূর্য.pdf
  4. জীলান সূর্য়ের হাতছানি.pdf
  5. আল্লাহর তলোয়ার.pdf
  6. মুহাম্মদ বিন কাসিম.pdf
  7. আঁধার রাতের মুসাফির.pdf
  8. ভেঙ্গে গেলো তলোয়ার.pdf
  9. কিং সাইমুনের রাজত্ব.pdf
  10. শেষ প্রান্তর.pdf
  11. রক্তা্ক্ত জনপদ.pdf
  12. শেষ বিকালের কান্না.pdf
  13. হেজাজের কাফেলা.pdf
  14. সিমান্ত ঈগল.pdf
  15. সাইমুন সিরিজ.pdf
  16. বখতিয়ারের তলোয়ার.pdf
  17. ফুরাত নদীর তীরে.pdf
  18. উহুদ থেকে কাসিয়ূন.pdf
  19. ১ম দিনের সূর্য.pdf
  20. কায়সার ও কিসরাহ.pdf
  21. নুর ই সেরহিন্দ.pdf
  22. আরব মরুতে সফর.doc
  23. ফরাতের তীর.pdf
  24. আরব দুহিতা
  25.  নাঙ্গা তলোয়ার - ১
  26.   নাঙ্গা তলোয়ার - ২
  27.   নাঙ্গা তলোয়ার - ৩
  28.  নাঙ্গা তলোয়ার - ৪
  29.  নাঙ্গা তলোয়ার - ৫
  30.  নাঙ্গা তলোয়ার - ৬ 

★নসীম হিজাযীর আসল নাম ছিলো শরীফ হুসাইন। নসীম হিজাযী ছদ্মনামে তিনি লেখালেখি করতেন। ১৯১৪ খৃস্টাব্দে পাঞ্জাব জেলার গুরুদাসপুরে শরীফ হুসাইন জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করলে তিনি পরিবারের সাথে পাকিস্তানে চলে আসেন। লাহোরে বসবাসরত অবস্থায় ১৯৯৬ সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।

★বিখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট, ঔপন্যাসিক এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ ১ নভেম্বর ১৯২০ খৃস্টাব্দে (স্বাধীনতাপূর্ব) পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের এক রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৯ খৃস্টাব্দের ১৬ ই নভেম্বর ৭৯ বছর বয়সে তিনি লাহোরে ইন্তেকাল করেন।

আরও ডাউনলোড করুন:


ইসলামে পোশাকের বিধান: ১ম পর্ব

মো: হাবীবুর রহমান

     মহাগ্রন্থ আল কোরআনে  ইরশাদ হয়েছে:
قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ
 'বল! আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের জন্য যে সব শোভার বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা নিষেধ করেছে কে?' (সূরা আ’রাফ : ১৩৮) 

     মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.) ইরশাদ করেন:
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالبَسُوا وَتَصَدَّقُوا، فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلاَ مَخِيلَةٍ
͑তোমরা খাও, পান কর, পরিধান কর এবং দান কর, তবে অপচয় ও অহংকার পরিহার কর।' ( সহীহ বোখারী; কিতাবুল লিবাস)

     পোশাক-পরিচ্ছদ মানব জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। জীবনের মৌলিক অধিকার ও মনুষ্যের প্রতীক।  পোশাক যেমন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঢেকে রাখা ও সৌন্দর্যের উপকরণ, তেমনি শরীয়তের দিক-নির্দেশনা মেনে তা ব্যবহার আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। কোরআন ও সুন্নাহে অন্যান্য বিষয়াদির মতো লেবাস-পোশাক বিষয়েও হুকুম-আহকাম দেওয়া হয়েছে। মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টির মাঝে বিশেষ পার্থক্য হয় এ পোশাকের দ্বারা। আল্লাহ তায়ালা শুধু মানব জাতিকেই পোশাকের নেয়ামত দান করেছেন। 

  মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:

يَابَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
 'হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করবে। আর অবতীর্ণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র ও তাকওয়ার পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এতে রয়েছে আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।' (সূরা আরাফ : ২৬) 
আয়াতে পোশাকের তিনটি প্রকার বলা হয়েছে এবং তৃতীয়টিকে তাকওয়ার পোশাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে: আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পোশাকই তাকওয়ার পোশাক। অর্থাৎ পোশাকের মধ্যেও তাকওয়া বা খোদাভীতি প্রকাশ পাওয়া উচিত। তা এভাবে যে, পোশাকে অহঙ্কার বা গর্বের ভঙ্গি যেন প্রকাশ না পায়। বরং তাতে নম্রতার চিহ্ন পরিদৃষ্ট হবে। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে:

مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ
'যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে  নিজের পোশাক ঝুলিয়ে চলবে, আল্লাহ তার প্রতি কেয়ামতের দিন (রহমতের) দৃষ্টি দিবেন না।' (সহীহ বোখারী, কিতাবুল লিবাস; হাদীস নং ৫৭৮৪)

পোশাক এমন অাঁটসাট বা পাতলা যেন না হয়, যাতে শরীরের গোপন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৃষ্টিগোচর হয়।
হযরত আলকামা (রা.) তার মা থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার হাফসা বিনতে আবদুর রহমান তার ফুফু উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকটে এল। তখন তার পরনে ছিল একটি পাতলা ওড়না। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং একটি মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন।(মুয়াত্তা মালেক ২/৯১৩, হাদীস : ৬)
মহিলাদের পোশাক পুরুষরা এবং পুরুষের পোশাক মহিলারা পরিধান করবে না। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে:

لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ
'রাসুলুল্লাহ (দ.) ঐ সব পুরুষদের ওপর লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং ঐসব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধারন করে।' সহীহ বোখারী, কিতাবুল লিবাস; হাদীস নং ৫৮৮৫)

শয়তান মানুষের চির দুশমন। সে সর্বপ্রথম জান্নাতে আদম ও হাওয়া (আ.) এর পোশাকের ওপর আক্রমণ করেছিল। যার ফলে তাদের দেহ থেকে জান্নাতি পোশাক খসে পড়ে যায়। 

  মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:

يَابَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
 'হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে, যেমন সে তোমাদের মা-বাবাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে। সে তাদের পোশাক খুলে দিয়েছে, যাতে তাদের লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদের এমনভাবে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাওনা। আমি শয়তানকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা ঈমান আনে না।' (সূরা আরাফ : ২৬-২৭)

মানুষকে পথপ্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে পাঠিয়েছেন লক্ষাধিক নবী-রাসুল। তাদের সর্বশেষ আগমন করেছেন বিশ্বনবী মুহাম্মদ (দ.)। তাঁর আনীত ধর্ম ইসলামের প্রতিটি বিধান সর্বকালের সব মানুষের জন্য কল্যাণকর ও সমভাবে প্রযোজ্য। কেয়ামত পর্যন্ত আগত বিশ্বমানবতার জন্য এ মহান ধর্মে রয়েছে চির সুন্দর ও কল্যাণজনক সংস্কৃতি।

  মহাগ্রন্থ আল কোরআনে  ইরশাদ হয়েছে:
صِبْغَةَ اللَّهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ
 'তোমরা আল্লাহর রঙ গ্রহণ করো। আল্লাহর রঙের চেয়ে উত্তম রঙ আর কার হতে পারে?' (সূরা বাকারা : ১৩৮)। 
আল্লাহর রঙ কী? মহানবী (দ.) তাঁর উম্মতদেরকে হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে বলে দিয়েছেন। তিনি ইসলামের রীতিনীতি পরিহার করে অপসংস্কৃতি গ্রহণ করতে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। এ মর্মে হাদীস শরীফে এসেছে:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
 'যে ব্যক্তি বিজাতিদের রীতিনীতি গ্রহণ করবে, সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে।'(মুসনাদে আহমদ, ৪র্থ খন্ড, হাদীস নং ৫১১৪)

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, তথাকথিত সভ্যতা-সংস্কৃতির নামে মুসলিম জাতি আজ গলাধঃকরণ করছে বিজাতিদের রীতিনীতি। মায়ের জাতি নারীদের আজ ব্যবহার করা হচ্ছে পণ্যের মডেলিং ব্যবসায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে এ ধরনের আচরণ আমাদের চিন্তিত করে।

রাসুলুল্লাহ (দ.) কর্তৃক পোশাকের দিক নির্দেশনা হলো:  হাদীস শরীফে  এসেছে: 

وَنَهَانَا عَنْ سَبْعٍ: عَنْ لُبْسِ الحَرِيرِ، وَالدِّيبَاجِ، وَالقَسِّيِّ، وَالإِسْتَبْرَقِ، وَالمَيَاثِرِ الحُمْرِ
'রাসুলুল্লাহ (দ.) অামাদেরকে সাতটি বিষয় নিষেধ করেছেন : রেশমী কাপড়. মিহীন রেশমী কাপড়, রেশম মিশ্রিত কাতান কাপড়, মোটা রেশমী কাপড় এবং লাল মীসারা কাপড় পুরিধান করতে।' (সহীহ বোখারী, কিতাবুল লিবাস; হাদীস নং ৫৭৪৯)

   ১.পোশাকের মূল উদ্দেশ্য সতর আবৃতকরণ এবং সৌন্দর্য অবলম্বন। তাই এমন অাঁটসাট ও পাতলা পোশাক পরা যাবে না, যাতে শরীরের গোপন অঙ্গ ফুটে ওঠে। রাসুল (সা.) বলেন, 'দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামে যাবে। একশ্রেণী, যাদের হাতে গাভীর লেজের মতো বেত থাকবে। আর তারা মানুষকে অন্যায়ভাবে প্রহার করবে। আরেক শ্রেণী, ওইসব নারী যারা পোশাক পরেও উলঙ্গ। এরা জান্নাতে যাওয়া তো দূরে থাক, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।' (মেশকাত)। অন্য হাদিসে এসেছে, 'দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিত আখেরাতে হবে উলঙ্গ।' (শুয়াবুল ঈমান : ৩০৮৫)।

   ২.পুরুষের পোশাক টাকনুর নিচে পরিধান করা হারাম। রাসুল (সা.) বলেন,

مَا أَسْفَلَ مِنَ الكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ
 'ইযারের যে পরিমাণ টাখনুর নিচে যাবে, সে পরিমাণ জাহান্নামে যাবে।' (সহীহ বোখারী, কিতাবুল লিবাস; হাদীস নং ৫৭৮৭)

   ৩. পুরুষের জন্য নারীর এবং নারীর জন্য পুরুষের পোশাক পরা হারাম। 

   ৪.পুরুষের জন্য রেশমের পোশাক পরা জায়েজ নেই। তবে নারীর জন্য সব ধরনের রঙিন পোশাক পরা বৈধ। কেননা, হাদীস এসেছে: 
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ " نَهَى عَنِ الحَرِيرِ
'নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (দ.) রেশম কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।' সহীহ বোখারী, কিতাবুল লিবাস; হাদীস নং ৫৭২৭)

কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত ও আদব: ১ম পর্ব

 সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর; যিনি পাপাচার ও অশ্লীলতার অমানিশায় নিমজ্জিত মানব সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার জন্য তার হাবীব সৃষ্টিকুলের মুক্তিরদূত রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর ওপর হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে নবুওয়্যতের সুর্দীঘ ২৩ বছরে মানব প্রয়োজনের চাহিদা অনুযায়ী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল্ কোরআন নাযিল করেছেন। মানব অন্তর যখন কালিমযুক্ত হয়ে যায়, দুনিয়ার প্রাচুর্যের মোহ ও প্রবৃত্তির চাহিদা যখন নফসকে দূর্বল করে ফেলে, শয়তান তার থাবায় বন্দি করতে চায় ঈমানকে; আর সেই মুহুর্তে নফস্, প্রবৃত্তি ও শয়তানের মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার হলো মহা-পবিত্র আল কোরআন। কোরআন মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয়। কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এই কোরআন মহান রবের এক মহা-নেয়ামত, ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের একমাত্র সহায়ক। রিক্ত হিয়ার দুশ্চিন্তা ও ভয় দূর করার মাধ্যম। স্রষ্টার সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের একমাত্র মাধ্যম, মুত্তাকীদের জন্য পথ-প্রদর্শক ও পুঞ্জিভুত সম্পদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়- অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যকারী ‘আল-ফোরকান’।

 মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক এর যেরূপ মর্যাদা-মর্তবা, তার কালাম কোরআন শরীফ এরও রয়েছে মর্যাদা, মাহাত্ম ও ফযীলত। ছহীহ্ শুদ্ধভাবে তাজভীদ অনুযায়ী কোরআন শরীফ তিলাওয়াত বা পাঠ করার মধ্যে অশেষ ফজীলত ও বরকত রয়েছে, অপরদিকে কোরআন শরীফ এর একটি হরফও যদি অশুদ্ধ বা তাজভীদের খিলাফ পাঠ করা হয, তবে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ্ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী পর্যন্ত পৌছার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাজভীদের সাথে কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করার হুকুম স্বয়ং আল্লাহ পাক অনেক আয়াতেই করেছেন।

   ☆মহান আল্লাহ পাক সূরা মুয্যাম্মিল-এর ৪ নং আয়াতে বলেন- ‘কুরআন শরীফকে তারতীলের সহিত ও পৃথক পৃথকভাবে স্পষ্ট করে পাঠ করুন।’

     আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ. لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ .

 “অবশ্যই যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসায়ের যার কোন ক্ষয় নেই। এ জন্য যে, আল্লাহ তাদেরকে তাদের আমলের পূর্ণ প্রতিদান দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল গুণগ্রাহী ” [ সূরা আল-ফাতির, আয়াত নং-২৯, ৩০ ]।

উপরোক্ত আয়াতের দিকে যদি আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করি, তাহলে আমাদের নিকট একটা বিষয় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে – মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বাগ্যে কোরআন তিলাওয়াতের কথা বলেছেন। এটি একটি ইবাদত যার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়ছেনে।

    কোরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি:

কোরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। আর কোরআন শেখা ও শেখানোকে সর্বোত্তম ব্যক্তি হওয়ার মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন মহানবী (দঃ)। উসমান রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন, 
.خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ 
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৪৭৩৯ ; সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং- ১১৮]।

    ☆ প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভঃ 

কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে।
 عن محمد بن كعب القرظى قال سمعت عبد الله بن مسعود رضى الله عنه يقول قال رسول الله صىل الله عليه وسلم من قرأ حرفا من كتاب الله فله به حسنة والحسنة بعشر امثالها لاأقول "الم" حرف ولكن ألف حرف ولام حرف وميم حرف. 

 “মুহাম্মদ ইবনে কাব আল কুরাযী রহ. বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসুুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ উচ্চারণ করবে তার জন্য রয়েছে একটি নেকী, আর একটি নেকী হবে দশগুণ। আমি বলছিনা যে, الم (আলিফ, লাম, মীম) একটি হরফ বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মীম একটি হরফ” [ সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং- ২৯১০]।

    ☆ কোরআন পাঠকারী ও আমলকারী আল্লাহর পরিবারভুক্তঃ 

যারা কোরআন তিলাওয়াতে লিপ্ত থাকে এবং কোরআনের বিধানকে নিজেদের আদর্শ ও পথরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে হাদীসে মহনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহলুল কুরআন (কুরআনধারী) রূপে অভিহিত করেছেন। তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ হিসেবে ইরশাদ করেন-

 عن أنس رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن لله تعالى أهلين من الناس . قالوا يا رسول الله من هم ؟ قال : هم أهل القران أهل الله وخاصته

 মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবারভূক্ত। সাহাবীগণ আরয করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তিলাওয়াতকারী ও তার উপর আমলকারী, তারা হল আল্লাহর পরিবার এর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ” [ মুসনাদে আহমদ, সুনানে নাসায়ী, মুসতাদরাকে হাকেম]।

    কোরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবেঃ 

কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) হাদীসে বলেছেন:
 عَنْ زَيْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَلاَّمٍ يَقُولُ حَدَّثَنِى أَبُو أُمَامَةَ الْبَاهِلِىُّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ  اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لأَصْحَابِهِ


“তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কোরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯১০ ] ।

 ☆কোরআন পাঠে সাকিনা অবতীর্ণ হয়ঃ 

عَنِ الْبَرَاءِ قَالَ كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُورَةَ الْكَهْفِ وَعِنْدَهُ فَرَسٌ مَرْبُوطٌ بِشَطَنَيْنِ فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدُورُ وَتَدْنُو وَجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ مِنْهَا فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ  تِلْكَ السَّكِينَةُ تَنَزَّلَتْ لِلْقُرْآنِ

 “সাহাবি হযরত বারা ইবনে আযেব রা. বর্ণনা করেছেন-জনৈক সাহাবি সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করছিলেন। তার নিকট রশি দিয়ে বাঁধা একটি ঘোড়া ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই একটি জলধর তাকে ঢেকে নিল এবং ক্রমেই সেটি কাছে আসছিল আর ঘোড়া ছোটাছুটি করছিল। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে পূর্ণ ঘটনা খুলে বললেন। শুনে রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন সেটি সাকীনা (এক প্রকার বিশেষ রহমত যা দ্বারা অন্তরর প্রশান্তি লাভ হয়) কোরআনুল কারীমের তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছে” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৮৯২]।

    ☖ রাসুল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আরও ইরশাদ করেন..

ما اجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله ويتدارسونه بينهم إلا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملائكة وذكرهم الله فيمن عنده (أبو داود عن أبى هريرة)

 “যে কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কোরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজদের মাঝে তা পঠন ও পাঠন করে, তাদের উপর শান্তিঅবতীর্ণ হয়, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে রাখে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে এবং আল্লাহ তাআলা নিকটস্থ ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে আলোচনা করেন” [সুনানু আবি দাউদ ; জামিউল আহাদিস, খন্ড-১৮, হাদীস নং- ১৯৬৬৫]।

    ☆ যারা কোরআন তিলাওয়াতে দূর্বল; তাদের জন্য দু’টি সওয়াবঃ 

সমাজে আমরা অনেককে দেখি তারা এমনভাবে কোরআন তিলাওয়াত করেন মনে হয়, তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরও খুব মহাব্বতের সঙ্গে এবং যত্ন সহকারে তিলাওয়াত অব্যাহত রাখেন। তাদের জন্য রয়েছে দু’টো সাওয়াব। এ প্রসঙ্গে নিম্ন বর্ণিত হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য।
عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهُوَ مَاهِرٌ بِهِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِى يَقْرَؤُهُ وَهُوَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِ فَلَهُ أَجْرَانِ

“কোরআনে অভিজ্ঞ ব্যক্তির স্থান হবে নেককার সম্মানিত সাফীরগণের (ফিরিশতা) সঙ্গে; আর যে কোরআন তিলাওয়াত করে এবং ঠেকে ঠেকে পাঠ করে, এ পাঠ তার জন্য সু-কঠিন। তার জন্যে রয়েছে দু’টো সাওয়াব ও প্রতিদান” [সুনানু আবি দাঊদ, হাদীস নং- ১৪৫৬; জামে তিরমিজী, হাদীসনং- ২৯০৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ২৪২৫৭; সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং- ৭৬৭]।

حياة الامام البيضاوي رحمه الله

ü    ذكر في كشف الظنون :
أولوا الألباب لم يأتوا ... بكشف قناع ما يُتلى
ولكن كان للقاضي ... يد بيضاء لا تُبلى.[1]
q    اسمه وتعارفه:
هو الامام القاضي عبد الله بن عمر البيضاوي رحمه الله عنه. أحد علماء أهل السنة والجماعة، وهو أصولي شافعي، و من كبار علماء التفسير والفقه والنحو.
ï   اسم أبيه وجده:
واسم الاب للامام البيضاويرح هو عمر بن محمد البيضاويرح وكنيته ابو القاسم، العالم الجليل المشهود له بالتقدم ‏في الفقه والأصول، وكان من الأئمة وتولى القضاء بشيراز ودرس وحدث وجمع بين العلم والتقوى. واسم جده المكرم هو محمد بن أبي الحسن علي البيضاويرح حيث كان عالم من علماء الشافعية.
ï   كنيته ولقبه:
المكشوف عندنا كضياء نصف النهار ان كنيته هو ابوالخير و ابوسعيد، ولقبه قاضي القضاة، ناصر الدين.
ï   النسب والنسبة:
هو الإمام القاضي المفسر ناصر الدين أبو سعيد أو أبو الخير عبد الله بن أبي القاسم عمر بن محمد بن أبي الحسن علي البيضاوي الشيرازي الشافعي التبريزي.
  ²وقد ذكر البضاويرح نسبه في مقدمة كتابه الغاية القصوي في دراية الفتوي قائلا : فاعلم اني قد اخذت الفقه عن والدي مولي الموالي الصدر العالي، ولي الله الوالي، قدوة الخلف وبقية السلف، امام الملة والدين ابو القاسم عمر قدس الله روحه وهو عن والده قاضي القضاة السعيد فخر الدين محمد بن الامام الماضي صدر الدين ابي الحسن علي البيضاوي قدس الله ارواحهم .....[2]
  ² ولقب البيضاوي نسبة إلى "البيضاء" التي و لُد بها وهي إحدى المدن المشهورة بفارس. والشيرازي نسبة إلى مدينة "شيراز" التي نشأ بها وتولى فيها منصب قاضي القضاة. والتبريزي نسبة إلى"تبريز" حيث توفي بها، والشافعي لأنه على مذهب الشافعيرح.
ï   مولده:
ولد القاضي ناصر الدين البيضاويرح في مدينة "البيضاء" بفارس قرب شيراز. ولا تعلم سنة ولادته تحديدًا والغالب أن مولده أوائل القرن السابع الهجري.
q    نشأته :
ولُد القاضي ناصر الدين في البيضاء، ونشأ بها أول حياته مع أسرته ذات علم ودين وفضل ومنصب. ثم رحل إلى شيراز، ( وكانت في ذلك الوقت عاصمة بلاد فارس. وكان لوالده منزلة عند الحاكم فولاه منصب قاضي قضاة شيراز، كما تولى جده من قبل قاضي القضاة). فنشأ في شيراز حيث تلقى فيها العلوم والمعارف عن والده في أول الأمر وتفقه على يديه، وأخذ في تعلم الكثير من العلوم في أصول الدين وأصول الفقه، والتفسير والعربية والأدب والتاريخ وفي علم الكلام والمنطق والفلسفة.
والبيضاوي لم يقتصر في تعليمه على والده فقط بل أخذ العلم عن كثير من علماء عصره لا سيمّا وشيراز كانت ملجأ العلماء والأدباء من جميع أقطار العالم الإسلامي، فتلقى العلم مبكّراً حتى برع فيه وألّف في جميع فنون العلم وعاش في شيراز حتى تولى منصب القضاء فيها.

q    شيوخ الامام :
تتلمذ الإمام البيضاوي على جملة كبيرة من الشيوخ، منهم :
  والده الإمام أبو القاسم عمر بن محمد بن علي البيضاويرح. أخذ عنه الفقه على مذهب الشافعي.
  الشيخ محمد بن محمد الكحتائي الصوفي، صحبه البيضاوي وأخذ عنه الطريق واقتدى به في الزهد والعبادة.
  الشيخ شرف الدين عمر البوشكاني الزكيرح. ولما توفي رثاه البيضاوي بقصيدة طويلة كانت مكتوبة على مرقده.
  الشيخ نصير الدين الطوسيرح . كما ذكر صاحب روضات الجنات.[3]
  الشيخ شهاب الدين السهرورديرح.

q    تلاميذه :
  الشيخ جمال الدين الكسائي محمد بن أبي بكر بن محمد المقرئرح.
  الشيخ روح الدين بن الشيخ جلال الدين الطياررح.
  القاضي روح الدين أبو المعاليرح.
  الشيخ الإمام فخر الدين أبو المكارم أحمد بن الحسن الجاربرديرح.
  الشيخ كمال الدين أبو القاسم عمر بن إلياس بن يونس المراغي أبو القاسم الصوفيرح.
  القاضي رزين الدين علي بن روزبها بن محمد الخنجيرح.
  تاج الدين الهنديرح.

q    عقيدته ومذهبه :
كان البيضاويرح متكلما اشعريا متصوفا شافعي المذهب. ظهر ذالك في كتابته في التفسير وغيرها من العلوم والفنون التي كتب فيها من الفقه والمنطق والعقيدة. ففي علم الكلام الف كتبا منها : الطوالع و الْإِيضَاح فِي أصُول الدّين وغيرها. وقد كان والد البيضاويرح شافعي المذهب، فكان لذالك اثر في تكوين شخصية البيضاوي واختياره لمذهب الشافعي.

q    قدوته العلمية :
وقد ذكر الامام تاج الدين السبكيرح في طبقات الشافعية الكبرى : كَانَ إِمَامًا مبرزا نظارا صَالحا متعبدا زاهدا، ولي قَضَاء الْقُضَاة بشيراز وَدخل تبريز وناظر بهَا وصادف دُخُوله إِلَيْهَا مجْلِس درس قد عقد بهَا لبَعض الْفُضَلَاء، فَجَلَسَ القَاضِي نَاصِر الدّين فِي أخريات الْقَوْم بِحَيْثُ لم يعلم بِهِ أحد، فَذكر الْمدرس نُكْتَة زعم أَن أحدا من الْحَاضِرين لَا يقدر على جوابها وَطلب من الْقَوْم حلهَا وَالْجَوَاب عَنْهَا، فَإِن لم يقدروا فالحل فَقَط فَإِن لم يقدروا فإعادتها، فَلَمَّا انْتهى من ذكرهَا شرع القَاضِي نَاصِر الدّين فِي الْجَواب فَقَالَ لَهُ لَا أسمع حَتَّى أعلم أَنَّك فهمتها فخيره بَين إِعَادَتهَا بلفظها أَو مَعْنَاهَا فبهت الْمدرس وَقَالَ أعدهَا بلفظها فَأَعَادَهَا ثمَّ حلهَا وَبَين أَن فِي ترتيبه إِيَّاهَا خللا ثمَّ أجَاب عَنْهَا وقابلها فِي الْحَال بِمِثْلِهَا ودعا الْمدرس إِلَى حلهَا فَتعذر عَلَيْهِ ذَلِك فأقامه الْوَزير من مَجْلِسه وَأَدْنَاهُ إِلَى جَانِبه وَسَأَلَهُ من أَنْت فَأخْبرهُ أَنه الْبَيْضَاوِيّ وَأَنه جَاءَ فِي طلب الْقَضَاء بشيراز فَأكْرمه وخلع عَلَيْهِ فِي يَوْمه ورده وَقد قضى حَاجته.[4]

q    ثناء العلماء عليه:
  × ذكر في البداية والنهاية : البيضاوي صاحب التصانيف هو القاضي الامام العلامة ناصر الدين عبد الله بن عمر الشيرازي، قاضيها وعالمها وعالم أذربيجان وتلك النواحي.[5]
  × وذكر العلامة جلال الدين السيوطيرح  في بغية الوعاة : كَانَ إِمَامًا عَلامَة، عَارِفًا بالفقه وَالتَّفْسِير والأصلين والعربية والمنطق؛ نظارا صَالحا متعبدا شافعيا.[6]  
  × قال السبكيرح : كان إماما مبرزا نظارا خيرا صالحا متعبدا.[7]
  × وقال ابن حبيبرح : تكلم كل من الأئمة بالثناء على مصنفاته ولو لم يكن له غير المنهاج الوجيز.
  × وقال ابن قاضي شهبةرح في طبقاته : صاحب المصنفات، وعالم أذربيجان، وشيخ تلك الناحية.[8]  

q    المصنفات :
وقد ذكر الامام السيوطيرح في كتابه بغية الوعاة في طبقات اللغويين والنحاة : صنّف
  ١. مُخْتَصر الْكَشَّاف.
  ٢. الْمِنْهَاج فِي الْأُصُول وشرحه ايضا.
  ٣. شرح مُخْتَصر ابْن الْحَاجِب فِي الْأُصُول.
  ٥. شرح الْمطَالع فِي الْمنطق.
  ٦. الْإِيضَاح فِي أصُول الدّين.
  ٧. الْغَايَة القصوى فِي الْفِقْه.
  ٨. الطوالع فِي الْكَلَام.
  ٩. شرح الكافية لِابْنِ الْحَاجِب و غيرها.[9]
وذكر غيرها من المصنفات و منها :
  لبّ اللباب في علم الإعراب.
  نظام التواريخ كتبه باللغة الفارسية.
  تحفة الأبرار و هي شرح المصابيح للبغوي رح.
  تهذيب الأخلاق في التصوف.

q    وفاته :
توفي الامام بمدينة تبريز، قال السبكي والأسنوي سنة إحدى وتسعين وستمائة، وقال ابن كثير في تاريخه والكتبي وابن حبيب توفي سنة خمس وثمانين، وأهمله الذهبي في العبر.[10]




[1]  ج١ ص١٨٦ 
[2]  البيضاوي ومنهجه في التفسير - ص١٠
 [3] ج٥ ص١٣٤ 
 [4] ج٨ ص١٥٨ 
 [5] ج١٣ ص٣٦٣ 
 [6] ج٢ ص٥٠ 
[7]  شذرات الذهب  - ج٥ ص٣٩١ 
 [8] مقدمة أنوار التنزيل وأسرار التأويل
[9]  ج٢ ص٥٠ 
[10]  شذرات الذهب ج٥ ص٣٩٢