সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর; যিনি পাপাচার ও অশ্লীলতার অমানিশায় নিমজ্জিত মানব সম্প্রদায়কে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার জন্য তার হাবীব সৃষ্টিকুলের মুক্তিরদূত রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর ওপর হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে নবুওয়্যতের সুর্দীঘ ২৩ বছরে মানব প্রয়োজনের চাহিদা অনুযায়ী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল্ কোরআন নাযিল করেছেন। মানব অন্তর যখন কালিমযুক্ত হয়ে যায়, দুনিয়ার প্রাচুর্যের মোহ ও প্রবৃত্তির চাহিদা যখন নফসকে দূর্বল করে ফেলে, শয়তান তার থাবায় বন্দি করতে চায় ঈমানকে; আর সেই মুহুর্তে নফস্, প্রবৃত্তি ও শয়তানের মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার হলো মহা-পবিত্র আল কোরআন। কোরআন মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয়। কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এই কোরআন মহান রবের এক মহা-নেয়ামত, ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের একমাত্র সহায়ক। রিক্ত হিয়ার দুশ্চিন্তা ও ভয় দূর করার মাধ্যম। স্রষ্টার সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের একমাত্র মাধ্যম, মুত্তাকীদের জন্য পথ-প্রদর্শক ও পুঞ্জিভুত সম্পদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়- অন্যায়ের মাঝে পার্থক্যকারী ‘আল-ফোরকান’।
মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক এর যেরূপ মর্যাদা-মর্তবা, তার কালাম কোরআন শরীফ এরও রয়েছে মর্যাদা, মাহাত্ম ও ফযীলত। ছহীহ্ শুদ্ধভাবে তাজভীদ অনুযায়ী কোরআন শরীফ তিলাওয়াত বা পাঠ করার মধ্যে অশেষ ফজীলত ও বরকত রয়েছে, অপরদিকে কোরআন শরীফ এর একটি হরফও যদি অশুদ্ধ বা তাজভীদের খিলাফ পাঠ করা হয, তবে সাওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ্ এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী পর্যন্ত পৌছার সম্ভাবনাও রয়েছে। তাজভীদের সাথে কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করার হুকুম স্বয়ং আল্লাহ পাক অনেক আয়াতেই করেছেন।
☆মহান আল্লাহ পাক সূরা মুয্যাম্মিল-এর ৪ নং আয়াতে বলেন- ‘কুরআন শরীফকে তারতীলের সহিত ও পৃথক পৃথকভাবে স্পষ্ট করে পাঠ করুন।’
☆আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ. لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ .
“অবশ্যই যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসায়ের যার কোন ক্ষয় নেই। এ জন্য যে, আল্লাহ তাদেরকে তাদের আমলের পূর্ণ প্রতিদান দিবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল গুণগ্রাহী ” [ সূরা আল-ফাতির, আয়াত নং-২৯, ৩০ ]।
উপরোক্ত আয়াতের দিকে যদি আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করি, তাহলে আমাদের নিকট একটা বিষয় দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যায় যে – মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বাগ্যে কোরআন তিলাওয়াতের কথা বলেছেন। এটি একটি ইবাদত যার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়ছেনে।
☆ কোরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি:
কোরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। আর কোরআন শেখা ও শেখানোকে সর্বোত্তম ব্যক্তি হওয়ার মাপকাঠি নির্ধারণ করেছেন মহানবী (দঃ)। উসমান রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেছেন,
.خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৪৭৩৯ ; সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং- ১১৮]।
☆ প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভঃ
কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে।
عن
محمد بن كعب القرظى قال سمعت عبد الله بن مسعود رضى الله عنه يقول قال رسول الله
صىل الله عليه وسلم من قرأ حرفا من كتاب الله فله به حسنة والحسنة بعشر امثالها
لاأقول "الم" حرف ولكن ألف حرف ولام حرف وميم حرف.
“মুহাম্মদ ইবনে কাব আল কুরাযী রহ. বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, রাসুুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ উচ্চারণ করবে তার জন্য রয়েছে একটি নেকী, আর একটি নেকী হবে দশগুণ। আমি বলছিনা যে, الم (আলিফ, লাম, মীম) একটি হরফ বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মীম একটি হরফ” [ সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং- ২৯১০]।
☆ কোরআন পাঠকারী ও আমলকারী আল্লাহর পরিবারভুক্তঃ
যারা কোরআন তিলাওয়াতে লিপ্ত থাকে এবং কোরআনের বিধানকে নিজেদের আদর্শ ও পথরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে হাদীসে মহনবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহলুল কুরআন (কুরআনধারী) রূপে অভিহিত করেছেন। তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ হিসেবে ইরশাদ করেন-
عن أنس رضي الله عنه قال :
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إن لله تعالى أهلين من الناس . قالوا يا رسول الله من هم ؟ قال : هم أهل القران أهل الله وخاصته
মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর পরিবারভূক্ত। সাহাবীগণ আরয করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তিলাওয়াতকারী ও তার উপর আমলকারী, তারা হল আল্লাহর পরিবার এর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ” [ মুসনাদে আহমদ, সুনানে নাসায়ী, মুসতাদরাকে হাকেম]।
☆কোরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবেঃ
কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) হাদীসে বলেছেন:
عَنْ
زَيْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَلاَّمٍ يَقُولُ حَدَّثَنِى أَبُو أُمَامَةَ
الْبَاهِلِىُّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا
لأَصْحَابِهِ
“তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কোরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯১০ ] ।
☆কোরআন পাঠে সাকিনা অবতীর্ণ হয়ঃ
عَنِ
الْبَرَاءِ قَالَ كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُورَةَ الْكَهْفِ وَعِنْدَهُ فَرَسٌ
مَرْبُوطٌ بِشَطَنَيْنِ فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدُورُ وَتَدْنُو
وَجَعَلَ فَرَسُهُ يَنْفِرُ مِنْهَا فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِىَّ -صلى الله
عليه وسلم- فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ تِلْكَ السَّكِينَةُ تَنَزَّلَتْ
لِلْقُرْآنِ
“সাহাবি হযরত বারা ইবনে আযেব রা. বর্ণনা করেছেন-জনৈক সাহাবি সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করছিলেন। তার নিকট রশি দিয়ে বাঁধা একটি ঘোড়া ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই একটি জলধর তাকে ঢেকে নিল এবং ক্রমেই সেটি কাছে আসছিল আর ঘোড়া ছোটাছুটি করছিল। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) এর দরবারে উপস্থিত হয়ে পূর্ণ ঘটনা খুলে বললেন। শুনে রাসূলুল্লাহ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন সেটি সাকীনা (এক প্রকার বিশেষ রহমত যা দ্বারা অন্তরর প্রশান্তি লাভ হয়) কোরআনুল কারীমের তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছে” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১৮৯২]।
☖ রাসুল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আরও ইরশাদ করেন..
ما
اجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتاب الله ويتدارسونه بينهم إلا نزلت عليهم
السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملائكة وذكرهم الله فيمن عنده (أبو داود عن أبى
هريرة)
“যে কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কোরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজদের মাঝে তা পঠন ও পাঠন করে, তাদের উপর শান্তিঅবতীর্ণ হয়, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে রাখে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে এবং আল্লাহ তাআলা নিকটস্থ ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে আলোচনা করেন” [সুনানু আবি দাউদ ; জামিউল আহাদিস, খন্ড-১৮, হাদীস নং- ১৯৬৬৫]।
☆ যারা কোরআন তিলাওয়াতে দূর্বল; তাদের জন্য দু’টি সওয়াবঃ
☆ যারা কোরআন তিলাওয়াতে দূর্বল; তাদের জন্য দু’টি সওয়াবঃ
সমাজে আমরা অনেককে দেখি তারা এমনভাবে কোরআন তিলাওয়াত করেন মনে হয়, তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরও খুব মহাব্বতের সঙ্গে এবং যত্ন সহকারে তিলাওয়াত অব্যাহত রাখেন। তাদের জন্য রয়েছে দু’টো সাওয়াব। এ প্রসঙ্গে নিম্ন বর্ণিত হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য।
عَنْ
عَائِشَةَ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ الَّذِى يَقْرَأُ
الْقُرْآنَ وَهُوَ مَاهِرٌ بِهِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ
وَالَّذِى يَقْرَؤُهُ وَهُوَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِ فَلَهُ أَجْرَانِ
“কোরআনে অভিজ্ঞ ব্যক্তির স্থান হবে নেককার সম্মানিত সাফীরগণের (ফিরিশতা) সঙ্গে; আর যে কোরআন তিলাওয়াত করে এবং ঠেকে ঠেকে পাঠ করে, এ পাঠ তার জন্য সু-কঠিন। তার জন্যে রয়েছে দু’টো সাওয়াব ও প্রতিদান” [সুনানু আবি দাঊদ, হাদীস নং- ১৪৫৬; জামে তিরমিজী, হাদীসনং- ২৯০৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং- ২৪২৫৭; সহীহ ইবনে হাব্বান, হাদীস নং- ৭৬৭]।
No comments:
Post a Comment