আত্মা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে রাসুল) আপনি বলুন! রুহ আমার প্রতিপালকের আদেশ মাত্র। মহিমান্বিত আসমানী কিতাব আল্ কোরআনের নির্দেশিত পন্থা অনুসরণ করে এই তাৎপর্যময় হুকুমের পবিত্রতা রক্ষা করা মানুষের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেননা, এখানেই তাকওয়া তথা খোদাভীতির অবস্থান। বাহ্যিক কদর্যতার কারণে যেমন মানব শরীর দূষিত হয়ে যায় তেমনি মহান রবের অবাধ্যতার কারণে এই আত্মাও কলুষিত হয়ে যায়। হাদীস শরীফে আত্মাকে একটি গোশতের টুকরা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যা বাম স্তনের দুই আঙ্গুল নিচে অবস্থিত। তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। এই আত্মশুদ্ধির ওপর নির্ভর করে মানুষের যাবতীয় কার্যক্রম ও ফলাফল। মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনে এই নফসকে তিনভাবে সম্বোধন করেছেন।
১. নফসে মুতমায়িন্নাহ বা প্রশান্ত আত্মা: কেবল আল্লাহর যিকিরেই যা প্রশান্ত হয়। যাদের অন্তিম শয্যায় ফেরেশতারা বলবেন:
أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ
তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও।
২. নফসে লাওয়ামাহ বা ভৎসনাকারী আত্মা: পরিপূর্ণ মুুমিন ব্যক্তি তার ভালো ও মন্দ কৃতকর্মের জন্য নিজেকে তিরস্কার করে। হাসান বসরী (র.) বলেন: কিয়ামতের দিন আসমান ও যমীনের এমন কেউ থাকবে না যে, সে তার আত্মাকে ভৎসনা করবে না।
৩. নফসে আম্মারাহ বা মন্দ আত্মা: যা মন্দ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে এবং মানুষকে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়।
তাযকিয়াতুন নফস বা আত্মশুদ্ধি :
অতএব, তাযকিয়াতুন নফস বা আত্মশুদ্ধির সংজ্ঞায় আমরা বলতে পারি যে, আত্মাকে শিরক ও তার যাবতীয় শাখা-প্রশাখা থেকে মুক্ত রাখা,
তাওহীদ ও তার সমস্ত শাখা-প্রশাখাকে অন্তরে প্রতিষ্ঠিত করা, মহান আল্লাহর সুন্দরতম নামগুলোর গুণে গুণান্বিত হওয়া, প্রভুত্বের যাবতীয় উপকরণকে বর্জন করে পূর্ণাঙ্গভাবে এক আল্লাহর দাসত্ব করা এবং প্রতিটি বিষয়ে শেষ নবী রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথ অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ
আল্লাহর কাছে পৌছে না এগুলোর গোশত এবং রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌছে তোমাদের (অন্তরের) তাকওয়া।
আত্মশুদ্ধি বিনষ্টকারী জিনিসগুলো হলো:
মহান আল্লাহর সাথে কাউকে শিরক করা. সুন্নতের বিরোধিতা করা, মনের মাঝে অহেতুক সন্দেহ ও সংশয় তৈরী করা, নেক আমলে অবহেলা ও গাফলতি করা ইত্যাদি। এগুলো এড়িয়ে আত্মশুদ্ধির অর্জন করা সকল মু’মিনের অবশ্য কর্তব্য। যেমন: বেশী বেশী কোরআন তিলাওয়াত করা, আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরী করা, সর্বদা জবানে মহান আল্লাহর যিকির করা, আন্তরিকভাবে তাওবা-ইসতিগফার করা, ইসলামের স্তম্ভগুলো সঠিকভাবে আমল করা, সৎ ও ধার্মিক লোকদের সহচর্য লাভ করা ইত্যাদি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন:
مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ.
অশোভনীয় কাজ পরিহার করা মানুষের ইসলামের সৌন্দর্যের অন্তর্ভূক্ত। তাই অশোভনীয় কাজ পরিহার করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ক্বলবকে পরিশুদ্ধ করতে পারি। তাযকিয়াতুন নফসের ব্যাপারে ইসলাম সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا (৯) وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا
সে-ই সফল যে তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং যে তার আত্মাকে কলুষিত করেছে সে ক্ষতিগ্রস্থ। হযরত সাঈদ ইবনে আবু হেলাল (রা.) বলেন: নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াতের পর একটু থেমে বলতেন: হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তওে তাকওয়া দিন। কেননা, আপনিই উহার মালিক এবং অভিবাবক। আর আপনিই সর্বোত্তম পরিশোধনকারী।
✎✎ মো: হাবিবুর রহমানআরবি প্রভাষক, দক্ষিণ দাসদী আলিম মাদ্রাসা।
চলবে.......
No comments:
Post a Comment