![]() |
সারসংক্ষেপ: মুহা: হাবিবুর রহমান
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অশোভন আচরণ ও ধৃষ্টতা প্রদর্শন যদিও একটি পুরাতন বিষয়, তথাপি আজকের বিশ্বে ধৃষ্টতার এ বিষয়টি নতুন আঙ্গিকে দেখা যাচ্ছে। অথচ তারা ভুলে যাচ্ছে যে, তাদের এসব অশোভন ও অশালীন কর্মকান্ড আল্লাহর নবী (দ.) ও ইসলামের কোনরুপ ক্ষতি করবে না। তাদের এরকম আচরণ করা বা না করা; দু’টোই সমান। অপরদিকে মুসলমানগণ এরকম অশোভন আচরণকারীদেরকে প্রতিহত করতে শরীয়তসম্মত ও এর বিপরীত; দুই পন্থাই অনুসরণ করছে। যেহেতু তারা প্রকাশ্যে ইসলাম ও নবী (দ.) এর বিরুদ্ধে এসব অশোভন আচরণ প্রদর্শন করছে; তাই মুসলমানদের দায়িত্ব হলো উহার প্রতিবাদ করা। আর আমাদের এ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো: অশোভন আচরণকারীদের প্রতি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আচরণ পদ্ধতি অনুসরণ করে উহার সমাধান করা।
অশোভন আচরণকারীদের প্রতি রাসুল (দ.) এর ব্যবহার:
১. ক্ষমা ও মহানুভবতা প্রদর্শণ পদ্ধতি:
মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল। যে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা.) কে অপবাদ দিয়ে ইফকের ঘটনা প্রচার করেছে। যার দ্বারা সে রাসুল (দ.) এর সম্মানে আঘাত করেছিল।
ইসলাম প্রচারের পূর্বেও যে সম্মানের কারণে তিনি আরবদের নিকটে পবিত্রতার স্থানে ছিলেন। অধিকন্তু এ ঘটনার পূর্বেও সে আল্লাহর নবী (দ.), তাঁর সাহাবাগণের প্রতি কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। ইসলাম ও আল্লাহর নবী (দ.) কে খাটো করার কোন সুযোগই সে হাতছাড়া করেনি। এতদসত্তেও যখন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে হযরত আয়েশা (রা.) এর নিষ্পাপ হওয়ার ঘোষনা দেন। তখন এ মনাফিকের পুত্র রাসুল (দ.) এর কাছে তার পিতার পক্ষ হয়ে ক্ষমা চাইতে আসে এবং তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। অতপর তার পিতার মৃত্যুর পর কাফন পড়ানোর জন্য সে রাসুল (দ.) এর কাছে জুব্বা মুবারক চান এবং রাসুল (দ.) তাকে তা দেন। তারপর সে রাসুল (দ.) কে তার বাবার জানাযা পড়াতে ও তার জন্য ক্ষমার দোয়া করার অনুরোধ করেন; আর নবী করিম (দ.) তাও করেন। সুতরাং আমরা যদি রাসুল (দ.) এর জীবনের কিছু মুহুর্ত নিয়ে পর্যালোচনা করি তবে দেখবো যে, তা ক্ষমা, মহানুভবতা ও উদারতায় ভরপুর। যেই গুণের কারণে আমরা খুবই বিস্মিত হবো এবং তাঁর এ মহৎ গুণাবলী নিয়ে গর্বিত হবো।হাদীস শরীফে এসেছে: হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা ইহুদীদের একটি দল রাসুল (দ.) এর দরবারে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করল। অতপর তারা বলল: আপনার মৃত্যু হ্উক। তখন আমি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললাম: বরং তোমাদেরই মৃত্যু হোক, তোমাদের ওপর আল্লাহর অভিশম্পাত। অতপর রাসুল (দ.) বললেন: হে আয়েশা! নিশ্চয়ই আল্লাহ কোমল ও দয়ালু। আর তিনি সকল কাজে কোমলতাকেই পছন্দ করেন। তখন আমি বললাম: আপনি কি শুনেননি তারা কি বলেছে? তিনি বললেন: আমি তাদের কথার জবাবে বলেছিলাম: وعليكم। (তোমাদেরও)।[১]
২. সহিষ্ণুতা ও ভদ্রতা প্রদর্শন পদ্ধতি:
আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথে অশোভন আচরণকারী কাফের ও মুনাফিকদের সাথে সব সময় ধৈর্য, নম্রতা ও উদারতা প্রদর্শন করেছেন। সামর্থ থাকা সত্তেও তিনি তাদের ওপর কোন রকম প্রতিশোধ নেননি। তাঁর জীবনী বিষয়ক গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করলে আমরা এ বিষয়ে আরো ব্যাপক জানতে পারবে। জানতে পারবো যে, তিনি বিধর্মী ও অশোভন আচরণকারীদের প্রতি কত উদার ও বিনম্র ছিলেন।
হাদীস শরীফে এসেছে: হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা মুশরিকরা রাসুল (দ.) কে এত অধিক মাত্রায় প্রহার করলো যে, তিনি সজ্ঞাহীন হয়ে গেলেন। অতপর হযরত আবু বকর (রা.) রাসুল (দ.) এর পাশ দাড়ালেন এবং তাদেরকে বললেন: তোমাদের ধ্বংস হোক। তোমরা কি এজন্যই এ ব্যক্তিকে মারতে চাও যে বলে যে, আল্লাহই হলো আমার প্রভু। তখন মুশরিকরা বলল: এ লোক কে? বলা হলো: সে হলো আবু কুহাফার পাগল ছেলে। তারা তাকেও আটক করল। রাবী বলেন: তারা রাসুল (দ.) কে ছেড়ে হযরত আবু বকর (রা.) এর ওপর চড়াও হলো। [২]
৩. বর্জন করা ও নিশ্চুপ পদ্ধতি:
বর্জন ও নিশ্চুপ থাকার পদ্ধতির মর্মার্থ হলো: তিনি তাঁর সাথে অশোভন আচরণকারীদেরকে কোনরুপ জবাব দিতেন না। বরং তিনি তাদেরকে এড়িয়ে যেতেন এবং তাদের প্রতি কোনরুপ গুরুত্ব দিতেন না। কেননা, তিনি জানতেন যে, তাঁর উপোহাসকারীদের জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট। অশোভন আচরণের বিপরীতে তিনি এমন প্রতিক্রিয়া দেখাতেন, যেন কিছুই হয়নি। আর হলেও তিনি এতে মনোযোগই দেননি।
হাদীস শরীফে এসেছে: হযরত আল্ আসওয়াদ ইবনে কাইস (রা.) বলেন: আমি জুনদুব ইবনে সুফিয়ান (রা.) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন: অসুস্থতার দরুন রাসুল (দ.) দুই বা তিন রাত তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে পারেননি। এসময় জনৈক মহিলা এসে বলল: হে মুহাম্মদ (দ.) আমার মনে হয় তোমার শয়তান তোমাকে পরিত্যাগ করেছে। দুই কিংবা তিনরাত আমি তাকে তোমার কাছে আসতে দেখি না।[৩] তখন আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করলেন: শপথ পূর্বাহ্নের! শপথ রজনীর যখন তা নিঝুম হয়। তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরুপও হননি।[৪]
এ মহিলা এসে রাসুল (দ.) কে বিদ্রুপ ও উপহাস করলো। জিব্রাইল (আ.) কে গালিও দিল। অথচ রাসুল (দ.) মহিলাকে কোন উত্তরই করলেন না। এখানে তিনি বর্জন ও নিশ্চুপ থাকার পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।
৪. অশোভন আচরণের বিপরীতে রাসুল (দ.) এর স্বীয়, চরিত্র ও বংশের অধিক প্রশংসা পদ্ধতি:
রাসুল (দ.) এর প্রতি অশোভন আচরণের বিপরীতে তাঁর নিজের পরিচয়, নিষ্কলুস চরিত্র ও তাঁর বংশের অধিক প্রশংসার রীতি; যা আমরা তাঁর পবিত্র জীবনী থেকে খুঁজে পাই। তাঁর শত্রু ও মিত্র নির্বিশেষে সকই তাঁর আল্লাহর রাসুল হওয়ার স্বীকৃতি ,তাঁর বংশের মর্যাদা ও তার নিষ্কলুস চরিত্রের প্রশংসা করেছেন। তিনি নিজেও তাঁর পবিত্রতার বর্ণনার করেছেন।
হাদীসে এসেছে: আল মুত্তালিব ইবনে আবু ওদায়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা হযরত আব্বাস (রা.) রাসুল (দ.) এর কাছে আসলেন। দেখে মনে হলো, তিনি লোকমুখে রাসুল (দ.) এর বংশ সম্পর্কে কিছু শুনেছেন। অতাপর নবী করিম (দ.) মিম্বরে সমাসীন হয়ে বললেন: বল তো আমি কে? তারা সবাই বলল: আপনি আল্লাহর প্রেরিত দূত! আপনার ওপর সালাম। তখন রাসুল (দ.) নিজেই বললেন: আমি মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব। মহান আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিকে সৃজন করার পর আমাকে তাদের মধ্যে উত্তম দলে রেখেছেন। অতপর তাদেরকে দু’ভাগে বিভক্ত করার পর, আমাকে তাদের সর্বোত্তম দলে রেখেছেন। অতপর তাদেরকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করার পর, আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে রেখেছেন। অতপর তাদেরকে বিভিন্ন বাড়ীতে বিভক্ত করার পর, আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম বাড়ী ও সর্বোত্তম ব্যক্তির মাঝে রেখেছেন।[৫]
৫.শত্রুতা ব্যতিত কঠিন কথার মাধ্যমে অশোভন আচরণকারীদেরকে প্রতিহত করা:
অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফির ও মুশরিকদের কথার জবাব কঠিন ভাষায় দিতেন। আর এটা তার জীবনে খুব কম দেখা গেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: আল্লাহর রহমতে আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়েছেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয়ের অধিকারী হতেন তবে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন।[৬]
হাদীস শরীফে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদা রাসুল (দ.) এর নামাযরত অবস্থায় আবু জেহেল তাঁর পাশ দিয়ে গমন করল। অতপর তাঁকে বলল: হে মুহাম্মদ! তোমাকে না আমি নামায না পড়তে নিষেধ করেছি। তুমি জান যে, এরচে লজ্জাকর কোন কিছু আমার আর নেই। অতপর রাসুল (দ.) তাঁকে ধমক দিলেন। অতপর হযরত জিব্রাইল (আ:) বললেন: অতপর সে তার সভাসদদের আহ্বান করুক। আর আমিও আহ্বান করবো জাহান্নামের প্রহরীদেরকে।[৭] আল্লাহর কসম! সে যদি তার সভাসদদের ডাকতো, তবে অবশ্যই আমি জাহান্নামের প্রহরীদেরকে আহ্বান করতাম।[৮]
এ হাদীসে আবু জেহেল নবী করিম (দ.) কে আল্লাহর ইবাদত থেকে বিরত থাকার আদেশ দিলে তিনি তাকে ধমক দেন। এতে তাঁর কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিল না।
৬.অশোভন আচরণকারীদের প্রতি বদদোয়া করার পদ্ধতি:
কাফির ও মুশরিকদের প্রতি বদদোয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যে, তারা যখন ইসলামের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনে সীমালংঘন করেছে। আর আল্লাহর ইবাদত থেকে আল্লাহর নবী ও তাঁল সাহাবাদেরকে নিষেধ করেছে; তখনই তিনি তাদের প্রতি বদদোয়া করছেন। আর এটাও তাঁর জীবনে খুব কম দেখা গেছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একদিন রাসুল (দ.) বায়তুল্লাহর নিকট নামায পড়তেছিলেন। এ সময় আবু জেহেল ও তার কয়েকজন সঙ্গী সেখানে বসা ছিলেন। এর পূর্বের দিন তথায় এক গোত্রের একটি উট যবাই করা হয়েছিল। তখন আবু জেহেল বললো: তোমাদের মাঝে কে এমন আছো যে, অমুক গোত্রের উটের নাড়িভুঁড়ি এনে মুহাম্মদের ঘাড়ের ওপর রেখে দিতে পারে, যখন সে সিজদায় যাবে। অতপর তাদের মাঝে সবচেয়ে বড় হতভাগ্য পাষন্ডটি উঠে গিয়ে তা এনে অপক্ষো করতে লাগলো। যখন নবী করিম (দ.) সিজদায় গেলেন, তখন সে পাষন্ডটি সে উটের নাড়িভুঁড়ি রাসুল (দ.) এর দু’কাধের মাঝখানে পিঠের ওপর রেখে দিয়ে আসল। ইবনে মাসউদ বলেন: (নাড়িভুঁড়ির নীচে চাপা পড়ে যে শত চেষ্টা করেও উঠতে পারছেন না, তা দেখে) তারা হাসাহাসি করতে লাগলো। আর একে অপরের দিকে বিদ্রুপাত্মক দোষ চাপাতে থাকলো। অথবা হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে ঢলে পড়লো। আমি দাড়িয়ে তা দেখছিলাম, কিন্তু আমার করা কিছুই ছিল না। হায়! আমার যদি কিছু করার শক্তি থাকতো তাহলে আমি রাসুল (দ.) এর পিঠের ওপর থেকে ওটা সরিয়ে দিতাম। এদিকে নবী করিম (দ.) সিজদায় পড়ে রইলেন। তিনি মাথাও তুলতে পারছেন না। অবশেষে কেউ গিয়ে ফাতেমাকে সংবাদ দিলেন। তিনি এসেই তার পিঠ থেকে ওটা সরালেন। ফাতিমা তখন কচি বয়সের ছোট্ট একটি মেয়ে ছিলেন। তিনি ওসব পাষন্ডদের লক্ষ্য করে কিছু গালি গালাজ করলেন। যখন নবী করিম (দ.) নামায শেষ করে মাথা তুলে দাড়ালেন, তখন তিনি উচ্চ আওয়াজে সেসব পাপিষ্ঠদের জন্য বদদোয়া করলেন। বস্তুত: তাঁর স্বাভাবিক অভ্যাস ছিল যে, যখন তিনি দোয়া করতেন তখন তিনবার দোয়া করতেন। আর যখন কিছু চাইতেন তখন তা চাইতেনও তিনবার। অতপর তিনি তিনবার বললেন: হে আল্লাহ তুমি কোরাইশদেরকে পাকড়াও করো। ওরা যখন তাঁর আওয়াজ শুনতে পেল যে, তিনি তাদের জন্য বদদোয়া করছের। তখন তাদের হাসি ঠাট্টা সব থেমে গেলো। আর তারা বদদোয়া শুনে ভীত হয়ে পড়লো। কেননা, এ শহরের এ জায়গায় দোয়া কবুল হয়, তা বৃথা যায় না) তারা ভীষণ ঘাবড়ে গেল। অতপর তিনি নাম ধরে বদদোয়া করলেন: হে আল্লাহ! তুমি আবু জেহেল ইবনে হিশাম, উৎবা ইবনে রবিয়াহ, শায়বা ইবনে রাবিয়া, ওয়ালীদ ইবনে উকবা, উমাইয়া ইবনে খালফ এবং উৎবা ইবনে আবু মুআইতকে পাকড়াও করো। তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমি তা ভুলে গেছি। ইবনে মাসউদ বলেন: সেই মহান সত্ত্বার কসম! যিনি মুহাম্মদ (দ.) কে সত্য দীন সহকারে প্রেরণ করেছেন! তিনি যেসকল লোকদের নাম নিয়েছেন; আমি তাদের প্রত্যেককে বদরের অন্ধকার কূপে টেনে এনে নিক্ষেপ করতে এবং তাদেরকে সেখানে পড়ে থাকতে দেখেছি।[৯]
৭. অশোভন আচরণকারীদেরকে তাদের প্রাপ্য শাস্তির (প্রহার ও হত্যা) মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতি:
এ পদ্ধতি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: তিনি কিছু সংখ্যক অশোভন আচরণকারীকে হত্যা ও শাস্তিদানের মাধ্যমে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন। কেননা, তিনি হলেন ইসলামের নবী। তিনি শুধুমাত্র আরবীই নন।
হযরত ইয়া’কুব ইবনে উৎবা থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই আবু জেহেল সাফা পবর্তে রাসুল (দ.) বিভিন্নভাবে বাঁধা দিত এবং খুব কষ্ট দিত। আর (তাঁর চাচা) হযরত হামযা (রা.) ছিলেন একজন শিকারী। একদা তিনি শিকারে ছিলেন। যখন তিনি বাড়ী ফিরলেন, তখন তাঁর স্ত্রী তাকে বলল: হে আবু আম্মারাহং আপনি যদি দেখতেন যে, আবু জেহেল আপনার ভাতিজার সাথে কিরুপ ব্যবহার করেছে। এ কথা শুনে হামযা (রা.) খুব রাগান্বিত হলেন। তিনি যেভাবে ঘরে প্রবেশ করেছিলেন তেমনি ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। তিনি মসজিদে প্রবেশ করলেন, আর তখন তার কাঁধে ধনুক ছিল। অতপর তিনি আবু জেহেলকে কুরাইশদের কোন এক মজলিসে পেলেন। তিনি কোনরুপ কথা না বলে আবু জেহেলের মাথা উঁচিয়ে ধরলেন এবং ধনুক দিয়ে তার মাথায় আঘাত করতে থাকেন। (এ কান্ড দেখে) কোরাইশের কিছু লোক হামযা (রা.) কে থামাতে অগ্রসর হলেন। অতপর হামযা (রা.) বললেন: আমার দীন হলো মুহাম্মদ (দ.) এর দীন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসুল। আল্লাহর শপথ! আমি এ ধর্ম থেকে বিচ্যুত হবো না। তোমরা যদি তোমাদের কথায় সত্যবাদী হও, তবে আমাকে বিরত রেখে দেখাও। হযরত হামযা (রা.) যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন, তার মাধ্যমে আল্লাহর নবী ও মুসলমানগণ মক্কাতে সম্মানিত হলেন। আর তাদের দীনের দাওয়াতের কাজ মজবুত হলো এবং কোরাইশরা তাকে ভয় করলো। কেননা, তারা জানতো যে, মুহাম্মদ (দ.) কে কিছু বললে হযরত হামযা (রা.) তাদেরকে ধরবে।[১০]
১. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল র, সহীহ, কিতাবূল মানাকিব, (দারু ইবনে কাসির, ইয়ামামা, বইরুত, ৩য় প্রকাশ:১৪০৭ হিঃ), ৬ষ্ঠ খন্ড, হাদীস নং ৬৫২৮।
২. বাজ্জার, আবু বকর আহমদ ইবনে আমর র, আল্ মুসনাদ, (মাকতাবাতুল উলুম ওয়াল হিকাম, মদিনা মুনাওয়ারা, ১ম সংস্করণ: ২০০৯ সাল), ১৪তম খন্ড, হাদীস নং ৭৫০৬।
৩. ইমাম বুখারী, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল র, সহীহ, কিতাবূল মানাকিব, (দারু ইবনে কাসির, ইয়ামামা, বইরুত, ৩য় প্রকাশ:১৪০৭ হিঃ), ৪র্থ খন্ড, হাদীস নং ৪৬৬৭।
৪. আদ্ দ্বোহা : ১-৩।
৫. ইমাম তিরমিজী, আবু ঈসা তিরমিজী র, السنن, কিতাবুদ দাওয়াত, (দারুল গুরবিল ইসলামি, বইরুত, সংষ্করণ: ১৯৯৮ সাল), ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪৩৩, হাদীস নং ৩৫৩২।
৬. আলে ইমরান : ১৯৫।
৭. আল আলাক : ১৬ ও ১৭।
৮. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র. আল্ মুসনাদ, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৬৪, হাদীস নং: ২৩২০।
৯. ইমাম মুসলিম, মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল্ কুশাইরী র, সহীহ, কিতাবুল জিহাদ, (দারুল জীল, বইরুত), ৫ম খন্ড, হাদীস নং ৪৭৫০।
১০. ইমাম তাবারানী, المعجم الكبير, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৪০, হাদীস নং ২৯২৬।
No comments:
Post a Comment