মানব অন্তর যখন কালিমযুক্ত হয়ে যায়, দুনিয়ার প্রাচুর্যের মোহ ও প্রবৃত্তির চাহিদা যখন নফসকে দূর্বল করে ফেলে। শত পাপের শৃঙ্খলে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে মানুষ। হতাশা আর গ্লাণি যখন তাকে পেয়ে বসে,এই পাপ রাশি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে তখন তওবার হাত তোলে। আর মহান আল্লাহ তাকে মার্জনা করে রহমতের দ্বারা আবদ্ধ করে নেন। আর আল্লাহ হলেন গফুরুর রাহিম, ক্ষমাশীল,দয়ালু। প্রত্যেক মানুষের প্রতি রয়েছে আল্লাহ তায়ালার সীমাহীন দয়া। শিরক ছাড়া মানুষ অতি জঘন্য ও ছোট-বড় যত অপরাধই করুক না কেন, আল্লাহর কাছে তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা তার সব পাপ ক্ষমা করে তাকে আপন করে নেন। হাদীসে এসেছে:
التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ
গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনাকারী ব্যক্তি নিষ্পাপ ব্যক্তির মত।[1]
☆فتح الباري কিতাবে আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী র. উল্লেখ করেন :
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মোবারক (র.) থেকে তাওবার শর্তের ব্যাপারে অতিরিক্ত বর্ণনা রয়েছে। তিনি বলেন : গুণাহের জন্য লজ্জিত হওয়া। পুনরায় পাপের দিকে ফিরে না যাওয়ার সংকল্প করা। অত্যাচারিত বা অন্যায়ভাবে আদায়কৃত জিনিস ফিরিয়ে দেওয়া। ফরয বিধানসমূহ থেকে যা নষ্ট করা হয়েছে তা আদায় করা। হারামের মাধ্যমে শরীরের যে বৃদ্ধি হয়েছে তাকে দুঃখ ও বিষন্নতার ( অনুতাপ) দ্বারা নিঃশেষ করে দিতে হবে যতক্ষন না পর্যন্ত পবিত্র না হয়। শরীরকে আনুগত্যের কষ্ট ও যন্ত্রণা আস্বাদন করাতে হবে যেমনিভাবে তাকে পাপের স্বাদ দেওয়া হয়েছে।2]
☆উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে:
কেহ কেহ বলেন : তাওবার শর্ত তিনটি। যথা: পাপ পরিহার করা, পাপের জন্য লজ্জিত হওয়া, পুনরায় পাপ না করার সংকল্প করা।[3]
☆شرح الأربعين النووية তে উল্লেখ করা হয়েছে : তাওবার শর্ত হলো পাঁচটি। যথা:
১. ইখলাস তথা আন্তরিকতা ও একাত্ততা কেননা, ইখলাস সকল ইবাদতের পূর্বশর্ত। আর তাওবাও একটি ইবাদত। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন:
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
তাদরেকে এছাড়া কােন নর্দিশে করা হয়নি যে তারা খাঁটি মনে একনষ্ঠিভাবে আল্লাহর এবাদত করব।[4]
২. নিজের কৃত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে লজ্জিত হওয়া। কিছু আহলে ইলম এটাকে তাওবার শর্তরুপে গণ্য করেননি।
৩. যে গুণাহ বা পাপ থেকে তাওবা করা হবে তা সম্পূর্ণরুপে পরিহার করা।
৪. পুনরায় পাপের দিকে ফিরে না যাওয়ার সংবল্প করা।
৫. তাওবা সময় মত করা কেননা, তাওবা কবুল না হওয়ার সময় আবার দুই প্রকার। যথা:
ক) খাছ সময়: যে সারা জীবন পাপ করে এবং তওবা করে না। মৃত্যুর মুখোমুখি হলে তওবা করে, তার তাওবা কবুল হবে না। আল্লাহ বলেন:
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّى إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ
আর এমন লােকদের জন্য কােন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে এমন কি যখন তাদের কারাে মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে আমি এখন তওবা করছ।[5]
খ) আম সময়: সূর্য পশ্চিম আকাশে উদিত হওয়া। কেননা, সূর্য উদিত হবে পূর্ব আকাশে এবং অস্ত যাবে পশ্চিম আকাশে; এটাই নিয়ম। আর যখন এর উল্টো হবে, সব মানুষ তখন ঈমান আনায়ন করবে কিন্তু তা কবুল হবে না।[6] হাদীসে এসেছে:
مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ
সূর্য পশ্চিম দিক হতে উদিত হওয়া পর্যন্ত ( কেয়ামতের পূর্ব ) যে তাওবা করবে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন।[7]
আরও পড়ুনঃ
[1]سنن ابن ماجه ,আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াযিদ র., ওফাত:২৭৩ হিঃ , (দারুল ফিকর;বইরুত) হাদীস নং- ১৮৫১।
[2]আবুল ফদ্বল আহমদ ইবনে আলী ইবনে হাজার আসকালানী র., ওফাত: ৮৫২হিঃ, فتح الباري, ( দারুল মা’রেফা; বইরুত) ১১ম খন্ড / ১০৩ পৃষ্ঠা।
[3]প্রাগুক্ত, ১৩তম খন্ড/ ৪৭১ পৃষ্ঠা।
[4]সুরা আল বায়্যেনাহ, আয়াত নং - ৫।
[5]সুরা আন নিসা, আয়াত নং - ১৮।
[6]মুহাম্মদ ইবনে সালেহ ইবনে মুহাম্মদ আল উসায়মিন র., ওফাতঃ ১৪২১ হি, شرح الأربعين النووية (দারুছ ছুরিয়া, বইরুত ) পৃষ্ঠাঃ ৪০১-৪০৪।
[7]ইমাম মুসলিম, আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ আল কুশাইরী র., الجامع الصحيح ( দারুল জীল;বইরুত, প্রকাশকাল ঃ ১২৯০ হিঃ) হাদীস নং ৭০৩৬।
awesmeeee
ReplyDeleteawesmeeee
ReplyDelete