গুণাহ করার পর করণীয়





    যদি তাওবাকারী তাওবা করার পর পুনরায় গুণাহে লিপ্ত হয় অথবা ভুলে পাপ কাজ করে ফেলে, তার করণীয় কি? কেননা, কু-প্রবৃত্তি মানুষের মজ্জাগত একটি উপাদান। এ থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর মানুষ পাপ করবে বলেই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ার আধার। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

لَوْ أَنَّكُمْ لَمْ تَكُنْ لَكُمْ ذُنُوبٌ يَغْفِرُهَا اللَّهُ لَكُمْ لَجَاءَ اللَّهُ بِقَوْمٍ لَهُمْ ذُنُوبٌ يَغْفِرُهَا لَهُمْ

    'যদি তোমরা গোনাহ করে আল্লাহ তাআলার মহান দরবারে তাওবা-ইস্তগিফার না করতে তবে আল্লাহ তাআলা এমন এক মাখলুক সৃষ্টি করতনে, যারা গোনাহ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা করতো, তখন আল্লাহ তাআলা তাদরেকে ক্ষমা করতনে।'[১]

    এহেন পরিস্থিতিতে তাওবাকারীর করণী সর্ম্পকে ইমাম গাযালী (র.) বলেন:
أن الواجب عليه التوبة والندم والاشتغال بالتكفير بحسنة تضاده
'যদি তাওবাকারী গুনাহ করে ফেলে, তবে তার ওপর দুটি বিষয় ওয়াজিব বা আবশ্যক। 
প্রথমত: সে তাওবা ও অনুতাপ করবে। 
দ্বিতীয়ত: এ গুণাহকে মিটিয়ে ফেলার জন্য তার বিপরীতে কোন পূন্যকাজ করবে।'[২]


    অনুতাপ বা অনুশোচনার পরিচয় এভাবে দেওয়া হয় যে- অত্যধিক দুঃখ ও বেদনা হওয়া, অশ্রু বিসর্জন করা ও প্রচুর কান্নাকাটি করা। যেমন: কেউ তার প্রেমাষ্পদকে হারানোর কারণে ও আপন সন্তানের বিপদের কারণে যেরকম অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করে।

     ইমাম গাযালী إحياء علوم الدين কিতাবে আরও উল্লেখ করেন:

وفي الآثار ما يدل على أن الذنب إذا اتبع بثمانية أعمال كان العفو عنه مرجواً أربعة من أعمال القلوب وهي التوبة أو العزم على التوبة وحب الإقلاع عن الذنب وتخوف العقاب عليه ورجاء المغفرة له وأربعة من أعمال الجوارح وهي أن تصلي عقيب الذنب ركعتين ثم تستغفر الله تعالى بعدهم سبعين مرة وتقول سبحان الله العظيم وبحمده مائة مرة ثم تتصدق بصدقة ثم تصوم


হাদীসে বর্ণিত আছে : মানুষ যখন পাপ কাজের পশ্চাতে আটটি কাজ করে, তখন আশা করা যায় তার সেই পাপ মার্জনা করা হবে। এগুলোর মধ্যে চারটি অন্তর দ্বারা সম্পাদিত হয়
১. তাওবা করা অথবা তাওবার সংকল্প করা।
২. গুণাহ থেকে বেঁচে থাকা।
৩. পাপের শাস্তিকে ভয় করতে থাকা।
৪. গুণাহ মার্জিত হওয়ার আশা করা।

আর বাকী চারটি অঙ্গ - প্রতঙ্গ দ্বারা সম্পাদিত হয়। যথাঃ
১. গুনাহের পর দু’রাকায়াত নামায পড়া।
 سبحان الله العظيم وبحمده ২. এই নামাযের পর সত্তর বার ইস্তিগফার এবং একশত বার
৩. কিছু দান খয়রাত করা।
(৪. একটি রোযা রাখা।'[৩

    হাদীসে আল্লাহর রাসুল (দ.) বলেন:

مَا مِنْ عَبْدٍ يُذْنِبُ ذَنْبًا فَيُحْسِنُ الطُّهُورَ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ يَسْتَغْفِرُ اللَّهَ إِلاَّ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ. ثُمَّ قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ (وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ) إِلَى آخِرِ الآيَةِ

'যদি কেহ গুণাহে লিপ্ত হওয়ার পর উত্তমরুপে উযু করে নামাযে দন্ডায়মান হয়ে দুই রাকায়াত নামায আদায় করে, অতপর ইস্তিগফার করে আল্লাহ তার পাপ মার্জনা করে দেন।'[৪]
    অতপর এ আয়াত তিলাওয়াত করেন:


 وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ

 'তারা কখনও কােন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কােন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা র্প্রাথনা কর। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবনে? তারা নিজের কৃতর্কমের জন্য হঠকারিতা প্রর্দশন করে না এবং জেনে - শুনে তাই করতে থাকে না।[৫]

সুতরাং আমাদের উচিত যথা সম্ভব সমস্ত পাপ কাজ থেকে বেচেঁ থাকা এবং পাপের উৎস থেকেও বেচেঁ থাকা। আর আমাদের অন্তরকে যাবতীয় কুচিন্তা থেকে থেকে মুক্ত রাখা। কেননা,আল্লাহর রাসুল বলেছেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ ارْبَعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ

হে মানব সকল! তোমাদের নফসের প্রতি সুবিচার কর।[৬]




১. ইমাম মুসলিম, আবুল হুসাইন মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ আল কুশাইরী র., الجامع الصحيح ( দারুল জীল;বইরুত, প্রকাশকাল: ১২৯০ হিঃ) হাদীস নং ৭১৪০।
২. ইমাম গাযালী, আবু হামিদ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল গাযালী আত তুসী র., ওফাতঃ ৫০৫ হিঃ, إحياء علوم الدين (দারুল মা’রেফা, বইরুত ) ৪র্থ খন্ড/ পৃষ্ঠাঃ ৪৬।
৩. প্রাগুক্ত।
৪. ইমাম আবু দাউদ, সুলাইমান ইবনে আশয়াছ আস সিজিস্তানী র., ওফাতঃ২৭৫হিঃ , السنن ( দারুল কিতাবিল আরাবি; বইরুত, )  হাদীস নং- ১৫২৩।
৫. সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং  ১৩৫।
৬. ইমাম বুখারী, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ঈসমাইল র., ওফাতঃ ২৮৬ হিঃ, الجامع الصحيح ( দারু ইবনে কাছির; ইয়ামামা; বইরুত, তৃতীয় সংস্করণ:  ১৪০৭ হিঃ) হাদীস নং- ২৮৩০। সুনানে আবি দাউদ:  ১৫৩০। 

1 comment: