সময়ের মূল্য যারা বুঝতেন

     by Md. Habibur Rahman


       মহানবী (দ.) ইরশাদ করেছেন

مَا مِنْ يَوْمٍ طَلَعَتْ شَمْسُهُ إِلَّا يَقُولُ: مَنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَعْمَلَ فِيَّ خَيْرًا فَلْيَفْعَلْ؛ فَإِنِّي غَيْرُ مَرْدُودٍ عَلَيْكُمْ
যখনই কোনদিনের‌ সূর্য উদিত হয়, তখন সে দিন বলে: যে আমার (নির্ধারিত সময়ের) ভিতর কোন কল্যাণকর্ম করতে পারে সে যেন তা করে নেয়। কেননা, আমাকে (এ সময়কে) আর তোমাদের নিকট পুণরায় পাঠানো হবে না।[1]

       হাদীসে আর এসেছে:
لَا تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ، وَعَنْ عِلْمِهِ مَا فَعَلَ بِهِ، وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ، وَفِيمَا أَنْفَقَهُ، وَعَنْ جِسْمِهِ، فِيمَا أَبْلَاهُ
কিয়ামতের দিন চারটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ব্যতিত কোন মানুষই তার পদদ্বয় সামনে বাড়াতে পারবেন না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, তা কিসে শেষ করেছে। তার জ্ঞান সম্পর্কে, তা কোন কাজে ব্যয় করেছে। তার সম্পদ সম্পর্কে; তা সে কিভাবে অর্জন করেছে এবং ব্যয় করেছে। তার যৌবন সম্পর্কে তা কিসে ক্ষয় করেছে।[2]

      এটি সর্বজন স্বীকৃত নীতিবাক্য যে, ‘সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করেনা।’ মানুষের জীবনকাল সীমিত; এই সীমিত কালে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। তাই প্রতিটি মুহূর্ত খুবই মূল্যবান। এই মূল্যবান সময়কে যথাযথ ভাবে কাজে না লাগিয়ে হেলায় অতিবাহিত করলে জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ক্ষতির জন্য আফসোস করা যায়; কিন্তু সেই সময়কে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। কোন পার্থিব সম্পদের মানদন্ডে সময়কে নিরুপন করা সম্ভব নয়। প্রকৃত বুদ্ধিমান তো সে-ই, যে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে পূর্ণ দৃঢ়তা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে ভবিষ্যতের পথে চলে। এক-একটি মুহূর্ত হিসাব করে খরচ করে আর সময়কে অধিক থেকে অধিকতর ফলপ্রসূ  করতে সচেষ্ট হয়। বোকা তো সেই, যে অতীতের নষ্ট হওয়অ সময় নিয়ে আফসোস করে। 

      আল্লাম ইবনুল জাওযী (র.) তদ্বীয় কিতাব مدارج السالكين বলেন:

الاشتغال بالندم على الوقت الفائت تضييع للوقت الحاضر

হাতছাড়া হয়ে যাওয়া সময়ের জন্য অনুশোচনা – অনুতাপে লিপ্ত হওয়া তো বর্তমান সময়কে নষ্ট করা।[3]

      সময়ের মূল্য যারা বুঝতেন:

  🔯ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান শায়বানী (র.)। তিনি ইমাম আবু হানিফা (র.) এর অন্যতম প্রসিদ্ধ ছাত্র ছিলেন। ইলম অন্বেষণের জন্য তিনি রাতে খুব অল্প সময় ঘুমাতেন। সব সময় বিভিন্ন কিতাব কাছে রাখতেন। যখন একটি বিষয় পড়তে পড়তে একগেয়েমি বোধ করতেন তখন অন্য বিষয় পড়তেন। আর তিনি চোখে পানি ছিটিয়ে ঘুম দুর করতেন। তিনি বলতেন: إن النوم من الحرارة ঘুম তো উষ্ণতা থেকেই আসে। তাই শীতলতার মাধ্যমেই তাকে প্রতিহত করতে হয়।[4]

  🔯আমর ইকনে বাহর (র.)। তাঁর হাতে যখনই কোন কিতাব আসতো (তা যে কোন বিষয়েরই হোক না কেন) তা শুরু থেকে শেষ পযন্ত পড়ে ফেলতেন। এক সময় যখন তিনি মনের চাহিদা পূরণের জন্য সহজে কোন কিতাব পাচ্ছিলেন না, তখন অর্থের বিনিময়ে কয়েকটি লাইব্রেরীর সাথে চুক্তি করেন এবং দিন রাত সেখানে পড়ে থেকে কিতাব অধ্যয়ন করতে থাকেন।[5]

      একটি প্রসিদ্ধ ঘটনা:
জনৈক ব্যক্তি কোথাও একটি অতি মূল্যবান হীরকখন্ড পেল।  সে তা নিয়ে এক জহুরীর নিকট গেল এবং হীরকখন্ডটি সম্পর্কে জানতে চাইল। জহুরী তাকে বলল, এর প্রকৃত মূল্য তখনই হবে যখন এর উপর কারুকার্য খচিত হবে। তবে এ কাজ অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর। এর জন্য মোটা অংকের পারিশ্রমিকও গুণতে হয়। লোকটি জহুরীর কথায় হীরার মূল্য উপলব্ধি করতে পারল এবং এ কাজের জন্য যে কোনো পারিশ্রমিক দিতে রাজি হয়ে গেল। জহুরীকে সাথে করে নিজের বাড়ি নিয়ে এল। জহুরীর একটি গুণ এই ছিল যে, সে গানও জানত। কথাবার্তার এক ফাঁকে লোকটি তাকে একটি গান শোনানোর আবেদন করল। জহুরী একটি গানের সুর ধরে গাইতে শুরু করল। এদিকে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। গান শেষ করে জহুরী বলল, আমার পারিশ্রমিক দিন, আমার সময় পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এ কথা শুনে লোকটি অবাক-বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলল, কীসের পারিশ্রমিক? আপনি তো এখনও হীরকখন্ডটি স্পর্শই করেননি! এবার জহুরী বললআরে, মূল্য তো সময়ের হয়। আর আমি তা দিয়েছি। সুতরাং আপনাকে এখন তার মূল্য দিতে হবে। ফলে বাধ্য হয়েই তাকে এর পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হল।[6]

       সময়ই তো জীবন:

       🔯উসতাজ হাসানুল বান্নাহ (র.) বলেন:

من عرف حق الوقت، فقد أدرك الحياة، فالوقت هو الحياة.

বলা হয়ে থাকে যে, সময় হলো স্বর্ণখন্ড কিংবা অমূল্য রতন। কিন্তু কথাটি তাদের জন্য যারা বস্তুগত মূল্য ছাড়া কোনকিছুকে মূল্যায়ন করতে জানে না। তবে, যাদের দৃষ্টি এর চেয়েও দূরে, এর চেয়েও ভিন্ন তাদের উদ্দেশ্যে বলা যায়: সময় তো তোমার জীবনকাল ছাড়া আর কিছু নয়![7]



আরও পড়ুন:

গুণাহ করার পর করণীয়।




[1] আবু বকর আল বায়হাকী, আহমদ ইবনে হুসাইন র., ওফাত:৪৫৮ হিঃ, شعب الإيمان ৫ম খন্ড/ পৃ:৩৬৫, হাদীস নং ৩৫৫৮।
[2] আবু ঈসা আত তিরমিজী, মুহাম্মদ ইবনে ঈসা র., ওফাত;২৭৯ হিঃ, الجامع الكبير ৪র্থ খন্ড, হাদীস নং ২৪১৭।
[3] শায়খ আব্দুল ফাতাহ, আবু গুদ্দাহ র., قيمة الزمن عند العلماء পৃ: ২৪।
[4] قيمة الزمن عند العلماء পৃ: ৩১
[5] প্রাগুক্ত, পৃ: ৩৯।
[6] মাসিক আল কাউসার, (জুমাদাল উলা, মে ২০০৮ সংখ্যা)
[7] ময়ের মূল্য যারা বুঝতেন, পৃ:১২৫।

No comments:

Post a Comment