তাওবাকারীদের স্তর

তাওবাকারীদের স্তর

ঈমানদার ব্যক্তি তার গোনাহকে এত বিরাট মনে করে যেন সে একটি পাহাড়ের নিচে বসে আছে। আর সে আশংকা করছে যে, পাহাড়টা তার ওপর ধসে পড়বে। পাপিষ্ঠ ব্যক্তি তার গোনাহকে একটি মাছির মত মনে করে, যা তার নাকে চলে যায়।[1] 

     মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন:
 وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ  

তারা কখনও কােন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কােন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা র্প্রাথনা কর। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবনে?
তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রর্দশন করে না এবং জেনে শুনে তাই করতে থাকে না।[২]

তাওবাকারীদের শ্রেণী বিন্যাস সম্পর্কে إحياء علوم الدين  কিতাবে বলা হয়েছে :

     اعْلَمْ أَنَّ التَّائِبِينَ فِي التَّوْبَةِ عَلَى أَرْبَعِ طَبَقَاتٍ الطَّبَقَةُ الْأُولَى أَنْ يَتُوبَ الْعَاصِي وَيَسْتَقِيمَ عَلَى التَّوْبَةِ إِلَى آخِرِ عُمْرِهِ فَيَتَدَارَكُ مَا فَرَطَ مِنْ أَمْرِهِ وَلَا يُحَدِّثُ نَفْسَهُ بِالْعَوْدِ إِلَى ذُنُوبِهِ إِلَّا الزَّلَّاتِ الَّتِي لَا يَنْفَكُّ الْبَشَرُ عَنْهَا في العادات مهما لم يكن في رتبة النبوة فَهَذَا هُوَ الِاسْتِقَامَةُ عَلَى التَّوْبَةِ وَصَاحِبُهُ هُوَ السَّابِقُ بِالْخَيْرَاتِ الْمُسْتَبْدِلُ بِالسَّيِّئَاتِ حَسَنَاتٍ وَاسْمُ هَذِهِ التَّوْبَةِ التَّوْبَةُ النَّصُوحُ وَاسْمُ هَذِهِ النَّفْسُ السَّاكِنَةُ النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ……الخ

জানা উচিত যে, তাওবার ব্যাপারে তাওবাকারীদের চারটি স্তর রয়েছে।[৩] যথাঃ

     ১ম স্তর: গোনাহগার ব্যক্তি গোনাহ থেকে তওবা করে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অটল থাকবে। পূর্বে যে সকল ক্রুটি করেছিল সেগুলো পূরণ করবে এবং পূনরায় সেই সমস্ত ক্রুটি - বিচ্যুতি ছাড়া গোনাহ করার কথা চিন্তাও করবে না। আর এ গুলো থেকে মানুষ নবী না হলে অভ্যাসগত ভাবে মুক্ত হকে পারে না। একেই বলা হয় তাওবায় অবিচল খাকা এবং এরই নাম ‘তাওবায়ে নাসুহা’বা খাঁটি তাওবা। আর এরুপ মনকেই কোরআনে ‘নাফসে মুতমায়িন্না’ বা প্রশান্ত আত্মা বলা হয়েছে।

     ২য় স্তর:  এমন তাওবাকারী যে মৌলিক ইবাদত পালনে এবং সকল কবীরা গোনাহ বর্জনে সুদৃঢ় থাকে। এতদসত্ত্বেও এমন গোনাহ থেকে মুক্ত নয়, যা ইচ্ছা ছাড়াই হয়ে যায়। যখন সে এরকম গোনাহ করে, তখন নিজেকে তিরস্কার করে, লজ্জিত হয় এবং ভবিষ্যতে এরুপ গোনাহর ধারে কাছে না যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে। এ রুপ মনকে ‘নাফসে লাওয়ামা’ বা তিরস্কারী মন বলে। কেননা, অনিচ্ছাকৃত পাপের কারণে এ মন নিজেকে ধিক্কার দেয়। যদিও প্রথম স্তরটি সর্বশ্রেষ্ঠ, তথাপি এ স্তরও যে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন তাতে দ্বিমতের অবকাশ নাই। এরুপ তাওবা কারীদের জন্য আল্লাহ ওয়াদা করেছেন :

 الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ

যারা বড় বড় গােনাহ ও অশ্লীলর্কায থেকে বেঁচে থাকে ছােটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয়ই আপনার পালনর্কতার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত।[৪] 

       হাদীস শরীফে এসেছে: 

المؤمن كالسنبلة يفيء أحياناً ويميل أحياناً

মুমিন গমের শীষের মত, কখনও গোনাহ থেকে ফিরে আসে আবার কখনও গোনাহর প্রতি ঝুঁকে পরে। [৫]

      হাদীস শরীফে আরও এসেছে : রাসুলুল্লাহ (দ.) বলেছেন - সমস্ত আদম সন্তানই গুণাহগার বা পাপী। আর উত্তম গুণাহগার হলো তাওবাকারীরা।[৬] 

     ৩য় স্তর: এমন তাওবাকারী যারা তাওবা করে কিছুকাল অটল থাকে। এরপর কোন গোনহের খায়েশ প্রবল হয়ে যায় এবং তা ইচ্ছাকৃতভাবে করে ফেলে। কিন্তু, এতদসত্ত্বেও তারা যথারীতি ইবাদত পালনে সর্বদা তৎপর থাকে এবং থায়েশ থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য গোনাহ বর্জন করে। কেবল এক বা দু’গোনাহের ব্যাপারে তারা অক্ষম থাকে এবং এগুলো থেকে তাওবা করার ইচ্ছা মনে মনে পোষণ করে। কিন্তু, আজ কাল করে তা পিছিয়ে দেয়। এরুপ লোকদের শানে আল্লাহ বলেন:


وَآخَرُونَ اعْتَرَفُوا بِذُنُوبِهِمْ خَلَطُوا عَمَلًا صالحاً وآخر سيئاً


“কিছু লোক তাদের গোনাহ স্বীকার করে। তারা একটি পূণ্যকাজ করে এবং অপরটি পাপকাজ।” [৭] 

     ৪র্থ স্তর:  এমন তাওবাকারী যারা তাওবার পর কিছুদিন অটল থাকে, এরপর এক গোনাহ অথবা বহু গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তাদের অন্তরে তাওবা করার ইচ্ছা থাকে না এবং গুণঅহের জন্য আফসোস করে না। এরুপ ব্যক্তি গুণাহে অবিচলদের অর্ন্তভূক্ত। এরুপ নফসকে বলা হয় ‘নাফসে আম্মারা বিস সু বা কুকর্মের আদেশদাতা মন। 

আরও পড়ুন:






[1] ইমাম বুখারী, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ঈসমাইল র., ওফাতঃ ২৮৬ হিঃ, الجامع الصحيح ( দারু ইবনে কাছির; ইয়ামামা; বইরুত, তৃতীয় সংস্করণ: ১৪০৭ হিঃ) হাদীস নং- ৫৯৪৯।
[২] সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং  ১৩৫।
[৩]ইমাম গাযালী, আবু হামিদ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ আল গাযালী আত তুসী র., ওফাতঃ ৫০৫ হিঃ, إحياء علوم الدين (দারুল মা’রেফা, বইরুত ) ৪র্থ খন্ড/ পৃষ্ঠাঃ ৪৩-৪৫।
[৪]সুরা আন নাজম, আয়াত নং- ৩২।
[৫]মুসনাদে আবি ইয়া’লা, সহীহ ইবনু হিব্বান, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাকী।
[৬]ইমাম ইবনু মাজাহ, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াজিদ র., ওফাত: ২৭৩ হিঃ, السنن ( দারুল ফিকর; বইরুত) হাদীস নং- ৪২৫১।
[৭]সুরা আত তাওবা, আয়াত নং- ১০২।

No comments:

Post a Comment