ইসলামের দৃষ্টিতে পীর

ইসলামের দৃষ্টিতে পীর

মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ পবিত্র কোনআনে ইরশাদ করেন:  আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে।[1] এই আয়াতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে,  জ্ঞানী যেহেতু আল্লাহর কুদরত সম্পর্কে অভিহিত; সেহেতু সে আল্লাহকে ভয় করা বা তার প্রতি অনুগত থাকাকে করণীয় কর্তব্য বলে ভাবে। ইসলামে যে জ্ঞানার্জনের তাগিদ দেয়া হয়েছে তার লক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধান। 

     ★মহানবী (দ.) ইরশাদ করেন

الْعِلْمُ عِلْمَانِ: عِلْمٌ فِي الْقَلْبِ، فَذَلِكَ الْعِلْمُ النَّافِعُ، وَعِلْمٌ عَلَى اللِّسَانِ، فَذَلِكَ حُجَّةُ اللَّهِ عَلَى خَلْقِهِ

‘ইলম হলো দু’প্রকার। এক. ক্বলবী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ যা উপকারী ইলম। দুই. লিসানী ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ; যা জিন-ইনসানের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ হতে দলীলস্বরূপ।[2]  
প্রথম প্রকার জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে
মানুষের মনে আল্লাহর ভয় আসে এবং তাকে প্রকাশ্য - অপ্রকাশ্য যাবতীয় কবিরাহ গুণাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।  আর দ্বিতীয় প্রকার ইলম মানুষ তার মেধার দ্বারা অর্জন করে থাকে। সুতরাং ব্যক্তির জন্য ইলমে জাহের ও বাতেন দুই জরুরী। কেননা, ঈমান ও ইসলামের ক্ষেত্রে এ দুইটি শরীর ও আত্মার ন্যায় অবিভক্ত।[3]   

     ★ইমাম মালেক বিন আনাস (রা.) বলেন

من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق، ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق، ومن جمع بينهما فقد تحقق

যে ব্যক্তি ইলমে শরীয়ত শিক্ষা করল অথচ ইলমে তাসাাউফ শিক্ষা করল না; সে ফসেকী করল। এবং যে ব্যক্তি ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করল অথচ শরীয়ত শিক্ষা করল না; সে মওনাফেকী করল। আর যে এ দুটির সমন্বয় করল সে পরিপূর্ণ হলো।[4]   

     ★পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
  1. হে মুমিনগণ!তোমরা অনুসরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (দঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা ধর্মীয় নেতা।[5] 
  2. হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় কর, এবং তাকে পাবার জন্য (নৈকট্য লাভের) অছিলা তালাশ কর ।[6] 
  3. আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে আরও ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
হে মুমিনরা! আল্লাহকে ভয় কর, আর সৎকর্মপরায়নশীলদের সাথে থাক।[7] 

     ★কবিতার ভাষায় বলা হয়: 
এক যামানা সোহবতে বা আউলিয়া .. বেহতার আজ ছদ সালেহ তায়াত বেরিয়া।

      উপরোল্লেখিত আয়াতে কারীমা ও হাদিসের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞানের পূর্ণতা ও যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ইলমে তাসাউফ আবশ্যকীয়। আর ইলমে তাসাউফ অর্জিত হয় একজন পীরের মাধ্যমে। আমাদের এই অদ্ভুত সমাজের কিছু অতি শিক্ষিত মানব নিজেকে কোরআন ও হাদীসের পরিপূর্ণ মান্যকারী হিসেবে এ প্রশ্ন করে থাকেন যে, পীর শব্দের উল্লেখ কোথাও আছে কি? তাদের জ্ঞাতার্থে বলবো

পীর শব্দটি ফার্সি। শব্দগতভাবে এর অর্থ হল জ্ঞানি। মূলত যিনি আল্লাহ পাককে পাইয়ে দেবার ক্ষেত্রে বা আল্লাহ পাক এর সাথে রূহানী সংযোগ করে দেয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, উনাকেই পীর সাহেব বলা হয়। কুরআন ও হাদিছ শরীফে যাদের আউলিয়া, ইমাম, হাদি, ছিদ্দিকিন, মুর্শিদ ও শায়খ বলা হয়েছে, ফার্সিতে তাদের পীর সাহেব বলা হয়।

     ফার্সি ভাষার শব্দ ‘পীর’  বাংলায় ব্যবহার হওয়ার কিছু কারন রয়েছে। পাক ভারতে ইসলামের প্রচার-প্রসার তথা স্থানীয় বিধর্মীদের মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে ফার্সি ভাষাভাষি আউলিয়ায়ে কিরামদের ভূমিকাই মুখ্য। যে কারণে এ স্থানে মুসলমানদের বন্দিগী জীবনে ফার্সির অনেক পরিভাষাই ব্যবহৃত হয়। আরবী সালাত, সাওম এর পরিবর্তে যেরূপ ফার্সি নামায, রোযা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক বলেন:

  “প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য হাদী বা হেদায়েতকারী রয়েছে।”[8]

এখন মানুষদেরকে হেদায়েত করার জন্য যুগে যুগে নবী রসূলগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। কিন্তু নবী রসূল আসার পথ তো বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু হাদীগণের আসার পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  পরে যুগে যুগে আউলিয়া কিরামগণই হাদী বা পীর হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত রাখবেন। আর সেই আউলিয়া কিরাম, ওলী-আল্লাহগণকেই উনার মুরীদদের নিকট পীর সাহেব বলা হয়।



[1] সুরা ফাতির : ২৮।
[2]মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবাহ, ৭ম খন্ড, হাদীস নং ৩৪৩৬১।
[3]فيض القدير شرح الجامع الصغير , ৪র্থ খন্ড/ ৩৯০ নং পৃ:। 
[4]حاشية العلامة العدوي على شرح الإمام الزرقاني, ৩য় খন্ড/ ১৯৫ নং পৃ:
[5]সুরা নিসা : ৫৯।
[6] সুরা মায়েদা :৩৫।
[7] সুরা তাওবা : ১১৯।
[8]সুরা রাদ : ০৭।

No comments:

Post a Comment