হুযুর কেবলা (পীরের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি)

হুযুর কেবলা


আমাদের ইসলাম ধর্ম ইফরাত ও তাফরিতের মাঝামাঝি, ধর্মীয় জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই এটা উপলব্ধি করতে পারেন। কেননা, শিথীলতা ও বাড়াবাড়ি আগেরকার যুগের ধর্মে ছিল। ইসলামে সর্ব প্রথম ঈমান আনা হয় একমাত্র আল্লাহর ওপর এবং তার রাসুলের ওপর। রাসুল (দ.) কে ভালোবাসা ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য আবশ্যক, তাই শুরু দিক থেকে আজ পর্যন্ত  মুসলমানগণ রাসুল (দ.) কে তার স্বীয় আত্মা ও যাবতীয় কিছু থেকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে। এটা শরীয়তের কাম্য এবং সবার ঈমানী দায়িত্ব। কিন্তু পীরকেও কি নিজের আত্মা ও যাবতীয় কিছু থেকে অধিক ভালোবাসা শরীয়তের কাম্য?
নাহ! কখনোও এরকম হতে পারে না। কেননা, পীরের ওপর ঈমান আনা ফরয নয় বা সে শারে’ও নয়। তবে আধ্যাতিক শিক্ষক হিসেবে ভালোবাসা যায়, এটা আন্তরিক। সুতরাং বুঝা গেল যে, পীরের ভালোবাসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা হাদীসের বিপরীত। 

      শতধাবিভক্ত মুসলিম উম্মাহর মাঝে পীরের এমন পাগলা আশিক আছেন, যে বলে: আমার পীরই হক্ক, শ্রেষ্ঠ পীর, পীরকুলের শীরমনি। আর যত পীর আছেন সবই বন্ড।  আর এগুলো শ্রবণ করত অন্যান্য পীরের মুরিদ ও তাদের মাঝে নজরুল যুগের মোল্লা পুরুত দাঙ্গার ন্যায় যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় একে অপরকে গালি দেওয়া থেকে শুরু করে হত্যাযজ্ঞ পর্যন্ত। অথচ হাদীসে এসেছে: মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং হত্যা করা কুফরী। খোদাকে পাওয়ার জন্য পীরের হাত ধরলেন, আর তারই জন্য ফাসেকী ও কুফরীও করে বসলেন। এদের তো পীরের হাতে বায়াত হওয়াই অনুচিত। শত জানোয়ারের আস্তানা চিড়িয়াখানাতেও তাদের রাখা অনুচিত। আমাদের সমাজে এমন অনেক পীরের মুরিদ রয়েছেন; যারা এ ব্যাপারে খ্বু বাড়াবাড়ি করে থাকে। এমনকি এটাও বলে যে, বাবা আমাকে জান্নাতে নিবে। অথচ হাদীসে বলা আছে কিয়ামতের মাঠে একমাত্র সুপারিশকারী হবেন রাহমাতুল্লিল আলমিন।  যেখানে পীরের জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারেই গ্যারান্টি নেই, সে আবার তার মুরিদকে জান্নাতে পৌছে দিবে! 

      আবার কতেক পীর এমনও আছেন যে, তাঁর মতের বা ইজ্জতের খেলাফ কোন কথা যদি কেউ বলে; তবে সে তাকে এবং তাঁর চৌদ্দ গোষ্ঠিকেই জারজ, কাফের ইত্যাদি লক্ববে ভূষিত করে ছাড়ে। আবার কতেক তো ইশকের টানে পীরকেই নবী বলে দাবী করে বসে। এসব অন্ধভক্তগণের দরুন হক্কানী পীর মাশায়েখদের ও তাদের দরবারের অমর্যাদা করতে এবং তাদেরকে কটু কথা বলতে কিছু মানুষ দ্বিধাবোধও করে না। তাদের মাঝে আলেম নামের মানুষও থাকেন আবার সাধারণ মানুষ থাকেন। অতঃপর শুরু হয়ে যায় দরবার ভিত্তিক দ্বন্দ্ব, হানাহানি আর যত গীবত। অথচ হাদীসে কোরআনে আল্লাহ বলেন: তোমরা একে অপরের গীবত করিও না।  নবী করিম (দ.) বলেন: গীবত  হলো যিনার চেয়েও ভয়াবহ। 

      আমার বলতে দ্বিধা নাই যে, একজন অমুসলিমকে আমরা যতটা না ঘৃণা করি; তার চাইতে কয়েক কোটি গুণ বেশী ঘৃণা করি অন্য মাযহাব বা পীরের মতাদর্শের মানুষকে। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে তাদের মাসলাক ব্যতিত অন্য মাসলাকের কোন ছাত্র দেখলে এমন ভাব করা হয়, মনে হয় সে যেন কুফরী করে ফেলেছে। ভাবটা এমন যে, দুনিয়াতে ঐ মাসলাক ছাড়া সবই বাতেল। আরে মশাই! সে তো মুসলাম তাকে এমন নজরে কেন দেখেন? কোনটার আকিদা হক্ক কোনটার বাতিল; এটা সে জ্ঞানী হবার পর ভালোভাবে বুঝে নিবে। আপনার কাজ হলো: বিধর্মীদেরকে ইসলামের দিকে আহবান করা, তাই করূন!

      আমরা এখানে মাযহাব, পীর, দল, আদর্শ ইত্যাদি নিয়ে ঝগড়া করছি; অন্যদিকে মিশনারী খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে তাদের ধর্ম প্রচারে লিপ্ত আছে। আবার যারা ইসলাম ধর্ম প্রচারে ব্রতী হচ্ছেন, বিজাতীয়দের মাঝে আমাদের ধর্মের আলো পৌছে দিচ্ছেন; ঘরের কোণে কুনো ব্যঙ্গের মত বসে আমরা তাকে কাফের ফতোয়া দিচ্ছি। মসজিদে মসজিদে জুমুআর খোতবায় তার গীবত করছি, এরই নাম কি মুসলমান। কিছুদিন আগে একটি ধর্মীয় চ্যানেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, আর এতে বিধর্মীদের চেয়েও আমরা কয়েক হাজার গুণ বেশী খুশি হয়েছিলাম। পশ্চিমা সভ্যতা আমাদের যুবসমাজকে আমূলে গ্রাস করে নিচ্ছে, আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতিকে বিকৃত করে দিচ্ছে, আগ্রাসণের দ্বারা মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, বিশ^দরবারে মুসলমানদেরকে অপদস্থ করছে, মুসলমানদেরকে নিঃশেষ করা নীল নকশা আঁকছে; আর আমরা নিজের আস্তানায় বসে বসে: এ কাফের, ও কাফের, এ বন্ড, ও জাহান্নামী,  নবী (দ.) নুর না মাটি, তারাবিহ বিশ না আট রাকায়াত ইদ্যাদি শাখা নিয়ম কানুন নিয়ে দলাদলী করছি। চলবে......




আরও পড়ুন:


No comments:

Post a Comment