আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পরিচয়: ১ম পর্ব
অন্ধকারের ধূম্রজালে আবদ্ধ, ভ্রান্তির শৃংঙ্খলে বেষ্টিত, কুফর ও শিরকের দাবানলে দগ্ধ, পৃথিবীর মোহে আসক্ত, কিংকর্তব্যবিমূঢ় দিশেহারা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দানের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুক্তির দূত , পথ হারা মানুষের সুপথের দিশারী , রাহামাতুল্লিল আলামীন সায়্যিদুনা মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর পক্ষ থেকে রাসূল হিসাবে এ ধরাধামে পাঠিয়েছেন । তাঁর আগমনের পর হক-বাতিলের সঠিক পরিচয় সকলের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠে । অসত্যের সকল নিশানা থেকে সত্য তার সর্বাঙ্গ সুন্দর রূপ নিয়ে বের হয়ে আসে ।
☆হাদীস শরীফে এসেছেঃ
إن بني إسرائيل افترقوا على إحدى و سبعين ملة و تفترق أمتي على ثلاث و سبعين ملة كلها في النار إلا ملة واحدة فقيل له : ما الواحدة ؟ قال : ما أنا عليه اليوم و أصحابي
বনী ঈসরাঈল সম্প্রদায় একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত তিহাত্তর দলে বিভক্ত হবে, সব দল জাহান্নামে যাবে, কিন্তু একটি দল জান্নাতে যাবে। তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসুল ওই দলটি কোনটা হুজুর (সাঃ) বললেন,
আমি আর আমার সাহাবীগণ যার উপর আছি।[1]
আমি আর আমার সাহাবীগণ যার উপর আছি।[1]
মহান আল্লাহর অপার কৃপায় ও তাঁর বন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে দলে দলে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহান করে । মানব হিতৈষী এ মহা মানব দীর্ঘ ৬৩ বছর এ পৃথিবীতে জীবন যাপন করে মানুষকে সত্যপথের সন্ধান দিয়ে বন্ধুর মিলনে গমন করেন অনন্ত জগত আখিরাতের পানে।সঠিক পথের পাথেয় হিসাবে উম্মাতের কাছে রেখে যান দুটি মহা মূল্যবান সম্পদ তথা পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহ।
☆হাদীস শরীফে এসেছেঃ
تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا: كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ
আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বিষয় রেখে গেলাম; এগুলোকে আকড়িয়ে থাকা অবস্থায় কেউ পথভ্রষ্ট হবে না। যথা: কিতাবুল্লাহ বা আল্লাহর কিতাব কোরআন এবং তাঁর নবীর সুন্নত।[২]
☆সেই সাথে তিনি হুশিয়ারী বাক্য উচ্চারণ করে বলেন:
আমার পর তোমাদের যারা বেঁচে থাকবে তারা বহু ইখতিলাফ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাহ ও আমার হেদায়েতের পথের পথিক খলীফাগণের সুন্নাহকে সর্বশক্তি দিয়ে ধারণ করবে।[৩]
প্রত্যেকটি জ্ঞানকে গ্রন্থ থেকে মন্থন করার জন্য শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । তাইতো মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন নাযিল করে ক্ষান্ত হননি।বরং তাঁর সাথে পবিত্র গ্রন্থকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সায়্যিদুনা রাসূল পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে শিক্ষক হিসাবে প্রেরণ করেছেন । যিনি সুন্নাহের মাধ্যমে উহাকে শিক্ষা দিয়েছেন।
ঠিক তেমনি মহা মূল্যবান দুটি জিনিস তথা পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহের আলোকে জীবন গঠনের জন্য শিক্ষক বা আদর্শ হিসাবে সায়্যিদুনা রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেখে গিয়েছেন তাঁর পবিত্র বংশধর ,ছিদ্দীকীন ,সাহাবায়ে কিরাম এবং আউলিয়া কিরামগণকে ।যাদের আদর্শ অনুসরনের জন্য আমাদেরকে আদেশও করেছেন।
☆তাঁর পবিত্র বংশধরগণের আদর্শ অনুসরন করা সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّتِهِ يَوْمَ عَرَفَةَ وَهُوَ عَلَى نَاقَتِهِ القَصْوَاءِ يَخْطُبُ، فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي تَرَكْتُ فِيكُمْ مَا إِنْ أَخَذْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا: كِتَابَ اللهِ، وَعِتْرَتِي أَهْلَ بَيْتِي
হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ (দ.) কে আমি বিদায় হজ্জের আরাফার দিন তার কাসওয়া নামক উষ্ট্রীতে আরোহন করাবস্থায় বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং তাকে বলতে শুনেছি: হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আমি তোমােদের মাঝে এমন জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা ধারন করলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব এবং আমার ইতরাত বা আমার আহলে বাইত।[৪]
☆অন্যত্র এসেছেঃ
إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ مَا إِنْ تَمَسَّكْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلُّوا بَعْدِي أَحَدُهُمَا أَعْظَمُ مِنَ الآخَرِ: كِتَابُ اللهِ حَبْلٌ مَمْدُودٌ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الأَرْضِ. وَعِتْرَتِي أَهْلُ بَيْتِي، وَلَنْ يَتَفَرَّقَا حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الحَوْضَ فَانْظُرُوا كَيْفَ تَخْلُفُونِي فِيهِمَا
তোমাদের মাঝে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা শক্তরুপে ধারন করলে আমার পরে কখনোও পথভ্রষ্ট হবে না। তার িএকটি অন্যটির তুলনায় বেশী মযাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর কিতাব যা আকাশ থেকে মাটি পযন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং অামার পরিবার। এ দু’টি কখনো আলাদা হবে না কাওসার নামক ঝর্ণায় অামার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পযন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য করো, অামার পরে দু’জনের সঙ্গে তোমরা কিভাবে আচরণ কর।[৫] চলবে...........
লেখক: ড. মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আযহারী।
লেকচারার, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশীয়া।
আরও পড়তে ক্লিক করুন:
[1] المستدرك على الصحيحي ,আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ হাকেম নিসাপুরী র., (প্রকাশক: দারুল কুতুব ইলমিয়া; বইরুত, ১৪১১ হিঃ), ১ম খন্ড/ ২১৮ পৃ: হাদীস নং ৪৪৪।
[২] الموطأ, ইমাম মালেক (রা.), ওফাত: ১৭৯ হিঃ, ((প্রকাশক: দারুল ইহইয়ায়িত তুরাছিল আরাবি; বইরুত, ১৪গ৬ হিঃ), ২য় খন্ড/ ৮৯৯ পৃ: হাদীস নং ৩।
[৩] মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, (প্রকাশক: মুয়াসসাসাতুর রিসালা), ২৮/৩৭৫; হাদীস নং ১৭১৪৫।
[৪]ইমাম আবু ঈসা, মুহাম্মদ ইবনে ঈসা তিরমিজী র. الجامع الصحيح ৬ষ্ঠ খন্ড হাদীস নং ৩৭৮৬।
[৫]ইমাম আবু ঈসা, মুহাম্মদ ইবনে ঈসা তিরমিজী র. الجامع الصحيح ৬ষ্ঠ খন্ড হাদীস নং ৩৭৮৮।
No comments:
Post a Comment