নবী (দ.) এর ওফাত দিবস কি ১২ ই রবিউল আউয়াল?
আজকাল মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধীতা করতে গিয়ে অনেকেই বলে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম তারিখ নিয়ে ইখতিলাফ আছে, কিন্তু ইন্তেকালের তারিখ নিয়ে কোন ইখতিলাফ নেই। তাই ১২ ই রবিউল আউয়াল নবীজীর ইন্তেকালের তারিখে শোক পালন না করে মিলাদীরা আনন্দ উপভোগ করে কেন? এমন কথা রবিউল আউয়াল মাস আসলে অনেক মিলাদ বিরোধী ভাইদের মুখ থেকে শোনা যায়। আজ আমরা আলোচনা করব, আসলে বিষয়টি কতটা সত্য? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের তারিখ নিয়ে কোন ইখতিলাফ নেই?
তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোমবার দিন ইন্তেকোল করেছেন এ ব্যাপারে কোন ইখতিলাফ নেই। এটি সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। কিন্তু কোন্ মাসের সোমবার তিনি ইন্তেকাল করেছেন সে ব্যাপারে দুটি মত পাওয়া যায়।
১. তিনি রমজান মাসের ১১ তারিখ ইন্তেকাল করেন। (ফাতহুল বারী- ৮/১২৯ পৃ.)
২. তিনি রবিউল আউয়াল মাসে ইন্তেকাল করেন। এ মতটির ব্যাপারে সকল ঐতিহাসিক একমত হয়েছেন।
এখন আমরা বলতে পারি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের সোমবারে ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু কোন্ তারিখের সোমবার তা নিয়ে বিস্তর ইখতিলাফ বিদ্যমান। বিভিন্ন ইতিহাসের কিতাবে এ ব্যাপারে মোটামুটি ৪টি মত পাওয়া যায়।
১ম. ১লা রবীউল আউয়াল
২য়. ২রা রবিউল আউয়াল
৩য়. ১২ ই রবিউল আউয়াল
৪র্থ. ১৩ ই রবিউল আউয়াল
আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার ইন্তেকাল করেন। এখন আমরা দেখব, এ মতটির গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু?
☆বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসের মাধ্যমে জানা যায় যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিদায় হজ্জে ভাষণের দিনটি ছিল ৯ ই জিলহজ্জ শুক্রবার। (বুখারী ও মুসলিম) সে হিসেবে সে বছর জিলহজ্জ মাসের ১ তারিখ ছিল বৃহস্পতিবার। ঐতিহাসিকদের মত অনুয়ায়ী তিনি বিদায় হজ্জের পরে ৮০ বা ৮১ দিন জীবিত ছিলেন। (ফাতহুল বারী- ৮/১৩০ পৃ.)
আমরা জানি, আরবি মাস ৩০ অথবা ২৯ দিন হয়ে থাকে। আবার উপরের হাদীসের হিসেব থেকে আমরা জেনেছি যে, সে বছর জিলহজ্জ মাস শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার। এ হিসেবে রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ কোনভাবেই সোমবার হয় না।
যেমন:
১. জিলহজ্জ, মুহাররম ও সফর তিনটি মাসই যদি ৩০ দিন ধরি তাহলে ১ লা রবিউল আউয়াল হয় বুধবার; ১২ রবিউল আউয়াল হয় রবিবার।
২. দুইটি মাস ৩০ ও একটি যদি ২৯ দিন ধরি তাহলে ১লা রবিউল আউয়াল হয় মঙ্গলবার; ১২ ই রবিউল আউয়াল হয় শনিবার।
৩. দুইটি মাস ২৯ ও একটি ৩০ ধরলে ১লা রবিউল আউয়াল হয় সোমবার; ১২ ই রবিউল আউয়াল হয় শুক্রবার।
৪. আবার তিনটি মাসই ২৯ দিন ধরলে ১লা রবিউল আউয়াল হয় রবিবার; ১২ ই রবিউল আউয়াল হয় বৃহস্পতিবার।
☆কোন হিসেবেই ১২ ই রবিউল আউয়াল সোমবার হয় না।
☆তাই কোন কোন ঐতিহাসিক নবীজী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকাল সোমবার ঠিক রাখার জন্য ১৩ রবিউল আউয়াল বলে মত দিয়েছেন।
☆২য় হিজরী শতকের প্রখ্যাত তাবেঈ আল্লামা সুলাইমান ইবনে তারখান আত তাইমী বলেন, নবীজী নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসুস্থতা শুরু হয় ২২ ই সফর শনিবার। ১০ দিন অসুস্থতার পর তিনি ২রা রবিউল আউয়াল সোমবার ইন্তেকাল করেন। আল্লামা সুহাইলী ও ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ. এ মতটিকেই গ্রহন করেছেনে। (ফাতহুল বারী- ৮/১২৯, ১৩০ পৃ.) এ মত অনুযায়ী সে বছর তিনটি মাসই ২৯ দিন ছিল, যা খুবই কম ঘটে। কেননা আরবি মাস সাধারণত কখনোই পরপর তিনটি মাস ৩০ বা ২৯ দিনে হয় না।
☆তাই কোন কোন ঐতিহাসিক দুইটি মাস ২৯ ও একটি ৩০ ধরে ১লা রবিউল আউয়ালে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকালের কথা উল্লেখ করেছেন।
☆কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন, আরবি বাক্য (ثانى عشر) ছানী আশার বা দশের দুই (১২) কে কেউ কেউ (ثانى شهر) ছানী শাহার বা মাসের দুই (২) বলে ভুলক্রমে উল্লেখ করেছেন। আসলে হবে ছানী আশার বা ১২ই রবিউল আউয়াল।
এর পরও মিলাদ বিরোধী ভাইয়েরা বলবেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকাল ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবারের ব্যাপারে কোন ইখতিলাফ নেই?
লেখক: মাও, নুুরুল আমিন আজাদী।
এ্যরাবিক লেকচারার, দারুল আবরার মডেল মাদরাসা।
আরও পড়তে ক্লিক করুন:
No comments:
Post a Comment