গান শোনার হুকুম

ইসলামে গান শোনার হুকুম

আজকাল সময় কাটানোর জন্য যে গুলোকে বিনোদন মনে করা হয়, সে ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি? তা আমরা নিম্নে উল্লেখ করছি। যদি আমরা এগুলোকে শরীয়তের দৃষ্টিতে দেখি; তাহলে দেখা যাবে এগুলো বিনোদন নয়, এগুলো হলো মন, মস্তিষ্ক ও আত্মাকে ক্ষত বিক্ষত করা।

♫ গান শোনা

অন্তরের প্রশান্তি বা সাময়িক আনন্দের জন্য ভালো কবিতা পাঠ করা শুধু বৈধই নয়, বরং এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও সলফে সালেহীনদের থেকেও বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু, এমন গান যাতে বাদ্য যন্ত্র ব্যবহার করা হয় অথবা গায়রে মাহরাম মহিলার কন্ঠে হয়- তাহলে তা শুধু হারামই নয়; বরং রাসুলুল্লাহ (দ.) কে আমাদের মাঝে পাঠানোর উদ্দেশ্যের পরিপন্থি। রাসুলুল্লাহ (দ.) বলেছেন: আল্লাহ আমাকে হেদায়াত ও রহমতস্বরুপ পাঠিয়েছেন এবং আল্লাহ আমাকে গান-বাদ্য, ক্রুশ ও জাহিলিয়াতের প্রথাকে ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন। বুখারী শরীফে এসেছে:
রাসুলুল্লাহ (দ.) বলেছেন: আমার উম্মতের কিছু লোক যিনা, ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যকে হালাল করার চেষ্টা করবে। তিনি আরও বলেন: গান অন্তরে নেফাক সৃষ্টি করে, যেমন পানি শস্য উৎপাদন করে।

       আল্লাহ বলেন:

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ

একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথা-বার্তা সংগ্রহ করে থাকে, না জেনে অন্ধভাবে এবং একে নিয়ে ঠাট্রা করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। |[১]

     ✪অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও সলফে সালেহীনদের মতে: গান, বাদ্যযন্ত্র, অনর্থক কিস্সা ও কাহিনীসহ যেসব বস্তু মানুষকে আল্লাহর ইবাদত ও স্মরণ থেকে অমনযোগী করে রাখে, সেগুলোই হলো لَهْوَ الْحَدِيثِ এর অন্তরভুক্ত। সহীহ বোখারীসহ অন্যান্য কুতুবে আসলিয়াতে তারা لَهْوَ الْحَدِيثِ এর এ তাফসীরই অবলম্বন করেছেন। তারা বলেন: 
لهو الحديث هو الغناء واشباهه
لَهْوَ الْحَدِيثِ হলো যা গান ও এ জাতীয় অন্যান্য বিষয়কে বুঝায়।   [২]
            মহানবী (দ.) বলেন:
الْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِي الْقَلْبِ

তোমরা বাদ্যযন্ত্র ও গান শোনা থেকে বেঁচে থাক। কেননা, এ দুটি বস্তু অন্তরে নেফাকির সৃষ্টি করে। [৩]

                 হাদীসে আরও এসেছে:
استماع الملاهي معصية والجلوس عليها فسق والتلذذ بها كفر

এ সমস্ত গান শোনা হচ্ছে গুণাহের কাজ , আর এসবের মজলিসে বসা ফাসেকী, আর এর স্বাদ আস্বাদন করা হলো আল্লাহর অনুগ্রহরাজীর অকৃতজ্ঞতা করার শামিল। 

                     হাদীসে আরও এসেছে:
لَيَشْرَبَنَّ أُنَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ، يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا، وَتُضْرَبُ عَلَى رُءُوسِهِمُ الْمَعَازِفُ وَالْمُغَنِّيَاتُ، يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمُ الْأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ

আমার উম্মতে একশ্রেণীর লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করতে শুরু করবে। আর তাদের সামনেই বাদ্যযন্ত্র ও নায়িকার দিয়ে গান বাজনা করানো হবে। আল্লাহ তাদেরকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিবেন। তাদের কাউকে বানর ও শুকরে পরিবর্তন করবেন। [৪]

                     হাদীসে আরও এসেছে:
যে ব্যক্তি গান শোনে তাকে জান্নাতে রুহানিউনদের সুমধুর গান শোনার অনুমতি দেওয়া হবে না। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসুল! রুহানিউন কি? তিনি বললেন: রুহানিউন হলো জান্নাতের শিল্পীগণ।

                     উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের দ্বারা আমরা এটা প্রমাণ করলাম যে, সর্ব প্রকার গান বাজনা হারাম। তবে হ্যা গানটি যদি তবলা সারিন্দা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রহীন এবং নারী কন্ঠে না হয়ে, সুমধূর কন্ঠের কোন কবিতা বা গজল হয় এবং তার বিষয়বস্তু যদি শ্লীল হয়, তা শোনা ও পড়া বৈধ।

     কাওয়ালী গান
বর্তমানে আমাদের দেশে মাজার ও দরবারে ঢোল পিটিয়ে নাচগান ও কাওয়ালীর করা ও এর মাধ্যমে চাঁদা তোলার রেওয়াজ দেখা যায়। আর ঢোল বাজিয়ে এসব কাওয়ালী করা, তাতে অংশগ্রহণ করা, চাঁদা চাওয়া এসবই হারাম।

     টিভি, সিডি ইত্যাদি দেখা

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বিনোদনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম মনে করা হয় টিভি, সিডি, ভিসি আর ইত্যাদি দেখাকে। পরিবারের সবাই একসাথে বসে একটু খোলামেলা প্রেমনির্ভর প্রোগ্রামগুলো যদি একটু না-ই দেখি, তবে বিনোদন আর কই হল? ভদ্রতা, শালীনতা, আত্মমযাদা, রুচিবোধ ও সুস্থ বিবেককে পিছনে ফেলে ভারতীয় সিরিয়াল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপে অর্ধনগ্ন মহিলাদের নাচ দেখা, সামাজিক ছবির নামে বেহায়াপনা ও অশ্লিলতাকে একসাথে সাবই গলধকরণ করছে। আর ইসলাম এসব একদমই অনুমোদন করেন না। তবে বিভিন্ন চ্যানেলে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সংবাদ যদি গায়রে মাহরাম কর্তৃক পরিবেশিত না হয় তা বৈধ।
     ফিল্ম দেখা
ফিল্ম দেখা একই সাথে অনেকগুলো কবিরাহ গুনাহকে অর্ন্তভুক্ত করে।
১. ছবি তোলা।
২. গান বাদ্য।
৩. নৃত্য।
৪. বেগানা মহিলাকে দেখা।
৫. নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা।
৬. চরিত্র বিধ্বংসী দৃশ্য।
৭. অপরাধ প্রবণতা।

                         আল্লাহ বলেন:

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ


যারা চায় যে, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়–ক, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।[৫] 



আরও পড়ুন:






[১]সুরা লোকমান : ০৭
[২]ফতওয়ায়ে শামী, ৬/৩৪৯।
[৩] سنن أبي داود, আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আশয়াছ আস্ সিজিস্তানী র., ওফাত: ২৭৫ হিঃ, হাদীস নং- ৪৯২৭।
[৪]سنن البيهقي الكبرى , ইমাম আবু বকর আল বায়হাকী র., মাকতাবাতু দারুল বায; মক্কা, ৮ম খন্ড/৫১২ পৃষ্ঠা, ১৭৩৮৩ নং হাদীস।
[৫]সুরা নুর : ১৯।




No comments:

Post a Comment