ঈদে মিলাদুন নবী (দ.)
পবিত্র ঈদে মিলাদুন নবী (দ.) উপলক্ষে আমরা প্রতিবছর রবিউল আউয়াল মাসে আনন্দ উদযাপন করে থাকি । বড়ই বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে আমাদের উক্ত নেক আমলকে কিছু জাহেল বা নবী বিদ্বেষীরা হারাম , নাজায়েজ এবং শিরক বলে সাধারণ ঈমানদার সুন্নি মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাছে । আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি নূর নবী (দ.) এর একজন তুচ্ছ গোলাম হিসেবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন নবী (দ.) উপলক্ষে আনন্দ উদযাপন করার বৈধতা ও শরীয়তে তার অস্তিত্ব প্রমাণের সাথে মিলাদুন নবী অস্বীকারকারীদের জবাব দেয়ার জন্য পোষ্টটি লেখার সৌভাগ্য লাভ করেছি আলহামদুলিল্লাহ ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ ।
ভূমিকাতেই সবাইকে সহজ ভাবে বুঝার ও তাদের অতিরিক্ত প্রশ্ন বন্ধের জন্যে শুরুতেই যে বিষয়টি বলে নিতে হচ্ছে সেটা হল আমরা ঈদে মিলাদুন নবী (দ.) উদযাপনের দালীল কুরআন ও হাদীসের আলোকেই উপস্থাপন করবো
ইনশা আল্লাহ । তবে যে ভাবে উপস্থাপন করবো সেটা হল জন্ম দিবসের (মিলাদ ) অস্তিত্ব , ফযিলত ও গুরুত্ব যে কুরআন ও হাদীসে আছে সেটা প্রমাণ করা । এবং গোটা বিষয়টি তিন ভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করবো ইনশা আল্লাহ । যথা: (ক) রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফযীলাত। (খ) ঈদ কাকে বলে , শরীয়তে দুই ঈদ ছাড়া আরও ঈদ আছে কিনা তার প্রমাণ । (গ) মিলাদ কাকে বলে , মিলাদের দিবসকে নির্দিষ্ট করে সেই দিবসে আনন্দ করার এবং নফল আমল করার হুকুম বা শরীয়তে তার অস্তিত্ব আছে কিনা । আসুন প্রথমেই এ মাসের গুরুত্ব বুঝি ।
ইনশা আল্লাহ । তবে যে ভাবে উপস্থাপন করবো সেটা হল জন্ম দিবসের (মিলাদ ) অস্তিত্ব , ফযিলত ও গুরুত্ব যে কুরআন ও হাদীসে আছে সেটা প্রমাণ করা । এবং গোটা বিষয়টি তিন ভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করবো ইনশা আল্লাহ । যথা: (ক) রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব ও ফযীলাত। (খ) ঈদ কাকে বলে , শরীয়তে দুই ঈদ ছাড়া আরও ঈদ আছে কিনা তার প্রমাণ । (গ) মিলাদ কাকে বলে , মিলাদের দিবসকে নির্দিষ্ট করে সেই দিবসে আনন্দ করার এবং নফল আমল করার হুকুম বা শরীয়তে তার অস্তিত্ব আছে কিনা । আসুন প্রথমেই এ মাসের গুরুত্ব বুঝি ।
☆রমজান মাস শ্রেষ্ঠ মাস ! আর রবিউল আউয়াল সর্বশ্রেষ্ঠ মাস :
তার দালীল সরাসরি কুরআন থেকে নিচ্ছি । রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্বের কারন একটি রাত সে রাতটি হচ্ছে ক্বদরের রাত আল্লাহ কদরের রাতে কুরআন নাযিল করেছেন আর কুরআন হচ্ছে রহমত । এবার ভালো করে বুঝুন কুরআন রহমত কার কার জন্যে কতটুকুন পরিধির জন্য ? আল্লাহ বলেন:
ونزلنا عليك الكتاب تبيانا لكل شيء وهدى ورحمة وبشرى للمسلمين
অর্থাৎ আমি এই কিতাব আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি সকল সমস্যার সমাধান স্বরূপ এবং হেদায়াতের পথ প্রদর্শক , শুভসংবাদের বাহন ও রহমত হিসেবে মুসলমানের জন্য । (সুরা নাহল : ৮৯)
তাহলে আল্লাহ কুরানকে কেবল মুসলমানের জন্যই রহমত করেছেন ! গোটা মানবজাতি বা সৃষ্টিযগতের জন্য নয় বরং তা সীমিত কেবল মুসলমানের জন্য । আর রবিউল আউয়াল মাসেও আল্লাহ রহমত নাযিল করেছেন সেই রহমত কার কার জন্যে কতটুকুন পরিধির জন্য ? সেটাও আল্লাহ কুরআনে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ
অর্থাৎ হাবীব আমার ! আপনাকে আমি আলামীন তথা গোটা বিশ্বজগতের জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি । (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)
তাই কুরআনের চেয়ে বড় রহমত , সকল রহমতের উৎস , রহমতে কুবরা হচ্ছেন রাসুলে দোজাহান (দ.) । তাই রবিউল আউয়াল মাসে তাঁর আগমনের কারনে গোটা রবিউল আউয়াল মাস সর্ব শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে । তার আরও প্রমাণ আমরা দেখতে পাই সেটা হল আল্লাহ পাক শুক্রবারকে (জুমা) শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন , ফযীলতপূর্ন করেছেন যেমন মেশকাতের হাদীসে জুমার দিনকে গরীব মিসকীনদের জন্য ঈদের দিন বলা হয়েছে । শুধু তাই নয় ইবনে মাযাহ শরীফে সহীহ সনদে জুমার দিনকে সকল মুসলমানের জন্য ঈদের দিন বলা হয়েছে হাদীসে পাকে জুমার দীনকে মুসলমানের জন্য ঈদের দিন বলা হয়েছে। আপনাদের সম্মুখে আমি একটি হাদীস উপস্থাপন করবো যা কট্টরপন্থী ইমাম তাইমিয়্যাও ( লামাযহাবীদের গ্রহণযোগ্য ইমাম ) সহীহ বলেছে দেখুন:
وقد صحة تسمية الجمعة عيدا عن النبي صل الله عليه وسلم فقد قال رسول الله صل الله عليه وسلم ان هذا يم عيد جعله الله للمسلمين فمن جاء الجمعة فليغتسل = رواه ابن ماجه صححه الألبانى
অর্থাৎ রাসুলে আরাবী (দ.) বলেন আল্লাহ সকল মুসলমানের জন্য জুমুয়ার দিনকে ঈদের দিন করে দিয়ছেন যে জুমুয়ার দিন পেল সে যেন গোসল করে নেয় । এবার দেখুন কেমন ঈদ যে সেই দিন গোসল করারও নির্দেশ দিয়েছেন।
এবার আসুন দেখি কি কারনে ( سبب) যুমার দিনকে ঈদের দিন করা হয়েছে। হাদিসে পাকে এসেছে:
عن النبي صل الله عليه وسلم انه قال ان من افضل ايامكم يوم الجمعة فيه خلق ادم
অর্থাৎ জুমুয়ার দিনকে ফজিলতপূর্ন করা হয়েছে কারন আল্লাহ পাক ঐ দিন হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেছেন ।
এবার বিবেকবান মানুষের বিবেকের আদালতে সাধারণ একটি প্রশ্ন হযরত আদমকে (আঃ) জুমুয়ার দিনে সৃষ্টি করার কারনে যদি সেই দিনটা সকল উম্মতের জন্য ঈদের দিন হতে পারে তাহলে যাকে সৃষ্টি না করলে গোটা জগত সৃষ্টি হতনা, আদম থেকে ঈসা (আঃ) কোন নবী সৃষ্টি হতনা, কি শুক্র শনি কি মাস যুগ কিছুই সৃষ্টি হতনা, তাঁর আগমনের দিন ও মাস কেন ঈদের দিন হবেনা ? এটা বুঝার জন্যেও কি দাওরা কামেল ফাযেল আর বি,এ এম,এ পাশ করা লাগবে ? নাকি কমন সেন্স বলতেও আল্লাহ সকলকে একটা নে’য়মত দিয়েছেন সেটা কি কেবল যাকাত আর চামড়া তুলার কাজেই ব্যাবহার করবে নাকি নবী (দ.) পক্ষেও ব্যাবহার করা উচিৎ ।
☆ঈদের আবিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ আল-আউদু ধাতু (العود مصدر ) থেকে নির্গত। যার আবিধানিক অর্থ হয়: বারবার ফিরে আসা পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে: যে খুশী বা আনন্দ বারবার ফিরে আসে তাকেই ঈদ বলা হয় , যদিও আনন্দের কারনটা ঘটে একবার কিন্ত সেই দিবসটা ঘুরে আসে বারংবার । তাই খুশীর দিনগুলো বারংবার উপস্থিত হলে তাঁর স্মরণে আনন্দ (ঈদ) উদযাপন করা বিদয়াতের সঙ্গে মোটেও সম্পর্ক নেই বিপক্ষের লোকেরা যেটা বলে থাকে যে জন্ম দিবস পালন করা খৃষ্টানদের রেওাজ নীতি (নাউযু বিল্লাহ) ।
☆এবার আসুন বিদয়াত কাকে বলে: কোন কাজ নূতন আবিষ্কার হলে বিদয়াত হবে কোনটা হবে না তা আসুন বুঝে নেই। হ্যাঁ যে কাজের উৎস , রীতি - নীতি বা রেওয়াজ কুরআন হাদীসে নেই আর সেটা যদি কেবল ইয়াহুদি খৃষ্টানদের রীতিনীতি হয়ে থাকে তাহলে সেটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত বা মুশাবাহাতুল ইয়াহুদ ওয়ান নাছারা হবে । কিন্ত যদি কোনও বিষয়ের মূল উৎস (আছল ) কুরআন বা হাদীসে থেকেই থাকে তারপর যদি সে কাজটি অন্য সম্প্রদায় করেও থাকে সেটা আর বিদআত , নাজায়েজ বা মুশাবাহাতুল ইয়াহুদ হবে না বলাও যাবে না । যেমন আমরাও রোজা রাখি তারাও (ইয়াহুদী নাছারা ) কমবেশ রাখে। যেমন: আল্লাহ ১০ই মহররম ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেছিলেন আর হযরতে মুসাকে (আঃ) বিজয় দান করেছিলেন তাই প্রতি বছর সেই দিনটি উপস্থিত হলেই ঐ ঘটনার স্মরণে মাদীনার ইয়াহুদিরা রোজা রেখে আনন্দের (ঈদ ) বহিঃপ্রকাশ করতো । নবীজী (দ.) হিজরত করে মাদীনাতুল মুনাওয়্যারায় তাশরীফ আনার পর তা শুনে নবী (দ.) বললেন মুসা আমাদের ভাই ! তাই সেই খুশীর দিনটি মানানোর (ঈদ) হক আমাদেরই বেশী ।
এখান থেকে দুটো বিষয় আমাদের নিকট স্পষ্ট হচ্ছে এক: ওয়াহাবীরা বলছে কোন দিবসকে পালন করাই জায়েজ নেই, অথচ এই হাদীসের আলোকে দেখা গেলো যে আনন্দের বিষয় একবার ঘটলেও সেই নির্দিষ্ট দিনকে স্মরণ করে বিশেষ আমল করা যায় । দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে: যদি রাসুলে আরাবী (দ.) সেই খুশিতে রোজা না রেখে আনন্দ ও শুকুরিয়া আদায় না করতেন তাহলে আমাদের রাখাটা বিদয়াত হয়ে যেতো আমলটি শুধুই তাদের (ইয়াহুদী ) হওয়ার কারনে কিন্ত যেহেতু রাসুল (দ.) রেখেছেন তাই সেটা আর বিদয়াত তো নয়ই, বরং এবাদাত হয়ে গেছে । তাহলে এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে সকল নব আবিষ্কারই বিদয়াত , হারাম বা পরিত্যাজ্য নয়; বরং নূতন ঐ সকল কাজ যার আছল (মূল ) শরীয়তে নেই কেবল ইয়াহুদী বা খৃষ্টানরাই করতো বা করে সেটা করা বিদয়াতই নয় বরং হারাম । উপরোক্ত আলোচনা ও দলীলের আলোকে এটা প্রমাণিত হল যে আল্লাহ মুসাকে (আঃ) প্রতি বছর বিজয় দেননি বরং একবারই দিয়েছিলেন কিন্তু বছর ঘুরে ঐদিনটা ফিরে আসে আর ফিরে আসে যতবার আনন্দ জাগে ততবার আর তাঁরই ধারাবাহিকতায় আজও আমরা রোজা রাখার দ্বারা আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ও শুকরিয়া আদায় করে থাকি ।
এবার যারা বলে দুই ঈদ ছাড়া শরীয়তে আর কোন ঈদ নেই তাদেরকে সরাসরি কুরআন থেকেও দুই ঈদ ছাড়া আরও ঈদের অস্তিত্ব ও দলীল তুলে ধরছি । হযরতে ঈসা (আঃ) আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করেন :
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا
উনি বলেন আমার প্রতিপালক আল্লাহ আসমান তথা উপর থেকে আমাদের জন্য মা’ঈদা (খাদ্য দিয়ে পরিপূর্ণ দস্তরখান) নাযিল কর যেন ঐ দিনটি আমার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদের দিন হয়ে যায় । (সুরা মায়েদা : ১১৪)
এখানে বুঝার বিষয় হচ্ছে তিনি কেবল নিজের যুগের জন্য নয়; অর্থাৎ (ঈসা আঃ) পরবর্তী দ্বারা আমাদেরকে বুঝিয়েছেন । তাহলে নুছুছুল কুরআন দ্বারাই শরীয়তে দুই ইদ ছাড়াও আরো ঈদের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ।
এবার আসুন দেখা যাক কোন দিবসকে নির্দিষ্ট করে কোন উদযাপন বা আমল করা যায় কিনা ! আমরা কুরআন থেকে প্রমাণ দিচ্ছি কেবল দিবসই নয় বরং যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করা হচ্ছ এবং বলছে যে ঠিক আছে মেনে নিলাম রবিউল আউয়াল মিলাদের মাস কিন্ত সেই দিবসকে নির্দিষ্ট করে আমল করা বৈধ নয় ! নাউযুবিল্লাহ অথচ স্বয়ং আল্লাহ নবীদের পবিত্র জন্মের দিবসকে খাছ (নির্দিষ্ট ) করে তাঁর নবীদের উপর ছালাম পাঠান । আল্লাহ পাক সুরাহ মারইয়ামের ১৫ নং আয়াতে বলেন:
وسلام عليه يوم ولد ويوم يموت ويوم يبعث حيا
এখানে জন্মের (মিলাদ ) দিন এবং জন্ম (মিলাদ ) উভয় শব্দ আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। স্বয়ং আল্লাহ তার নবী ইয়াহইয়ার (আঃ) জন্মের দিনকে ( মিলাদ ) উপলক্ষ করে / নির্দিষ্ট করে আল্লাহ বলেন ছালাম তথা সান্তি বর্ষিত হোক ইয়াহইয়ার (আঃ) উপর তাঁর মিলাদ , তাঁর ওফাত এবং দ্বিতীয়বার পুনরুত্থানের দিবসে ( হাশর ) । এখানে আমরা নুছুছুল কুরআন থেকেই নবীদের মিলাদ , মিলাদ দিবসের গুরুত্ব এবং সেই দিনে তাদের উপর ছালাম পাঠানোর শিক্ষা এবং দলীল উভয়টাই পেলাম । এটা গেলো নবী ইয়াহিয়ার (আঃ) মিলাদ ।
এবার আসুন সুরা মারিয়ামের ৩৩ নং আয়াত ! হযরতে ঈসা ( আঃ) যখন জানলেন যে নবীরা যেমন সাধারণ নন তেমনি তাদের মিলাদ ও মিলাদের দিনটিও সাধারণ নয় তাই আল্লাহ নবীদের নির্দিষ্ট মিলাদ দিবসে সালাম পাঠান তখন তিনি নিজে তাঁর মিলাদের দিনে সালাম প্রার্থনা করেন ।
এখানে স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন চলে আসতে পারে যে আল্লাহ ইয়াহিয়ার (আঃ) উপর নিজ থেকে সালাম পাঠালেন কিন্ত ঈসাকে (আঃ) চাইতে হলো কেন ? জ্ঞানীদের নিকট উত্তরটি খুবি সহজ ! কারন একটাই যে আমিতো বুঝিয়েই দিলাম যে নবীরা অসাধারন তাদের মিলাদ ও মিলাদের দিবসও গুরুত্ব ও ফযীলত রাখে তাই তুমিও তোমার মিলাদের দিনের জন্য সালাম প্রার্থনা কর এবং আমার শেষ নবী আসতেছেন ( মুহাম্মাদ {সাঃ}) তাঁর কেয়ামত পর্যন্ত আসা উম্মত যেন তাঁর মিলাদ , মিলাদ দিবসের গুরুত্ব বুঝে এবং সেই দিবসে আনন্দ করতে যেন কৃপণতা না করে । দেখুন হযরতে ঈসা (আঃ) আল্লাহ’র নিকট কি ভাবে প্রার্থনা করছেন:
والسلام علي يوم ولدت و يوم اموت و يوم ابعث حيا
হযরতে ঈসা ( আঃ) আল্লাহ’র দরবারে ফরিয়াদ করেন সান্তি বর্ষিত হোক আমার মিলাদের দিনে , আমার ওফাত এবং পুনরত্থানের দিবসে । তাহলে এখানেও নুছুছুল কুরআনের আলোকে জন্ম দিবসের গুরুত্ব , যাওয়াজ এবং শরীয়তের গণ্ডির ভিতরে থেকে আমলের দ্বারা উৎসব পালনের বৈধতা পাওয়া যায় । এখানে একটি সূক্ষ্ম বিষয় বুঝার প্রয়োজন ! তাহলে কি অন্যান্য দিনে পয়গম্বরদের উপর শান্তি / বর্ষিত হয়না ? অবশ্যই হয় প্রতি মুহূর্তেই হয় কারন আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীদের উপর শান্তি ও রহমত বেতিত দায়িত্ব পালন সম্ভবই নয় তাহলে প্রশ্ন পয়গম্বরদের জন্ম দিবসে আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট করে আবার সালাম কেন ? এরদ্বারা নবীদের (আঃ) মিলাদ ও মিলাদের দিনের আলাদা ফজীলত ও গুরুত্ব বুঝানই মূল উদ্দেশ্য ।
☆মিলাদুন নবী (দ.) পালনের দলীল হাদীসে থেকে নেই:
প্রথমত আমরা জেনে নেই মিলাদ কাকে বলে । باب ضرب يضرب =ولد يلد ولادة মানের জন্মের আলোচনা , জন্মকালীন ঘটনাবলী । যেমন আমরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ত্বের সনদ নিতে গেলে আমাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা থেকে যেটা দেয়া হয় তাতে লেখা থাকে জন্ম সনদ , ইংলিশে নিলে সেখানে লেখা থাকে বার্থ সার্টিফিকেট ( birth certificate ) তেমনি আরব রাষ্ট্রগুলোতে যখন জন্ম সনদ নিবেন যা আপনি ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন তাতে লেখা থাকে শাহাদাহ মিলাদ (شهادة الميلاد ) শুধু তাই নয় টাকা খরচ করে আপনাকে ডিকশনারি খরিদের প্রয়োজন নেই কেবল ব্রাউজার ওপেন করে google translate এ ইংলিশ টু আরবী ল্যাঙ্গুয়েজ সিলেক্ট করে birthday লিখে সার্চ দিন অর্থ দেখাবে عيد الميلاد আর عيد الميلاد النبى অর্থ: নবীজীর (দ.) পবিত্র জন্ম মুবারাকের আলোচনা । আর আল্লাহ তার রহমত তথা তার হাবীবের (দ.) যিকির বা স্মরণ করতে ও করাতে হুকুম করেছেন । সেটাকেই মিলাদ , যিকরে মিলাদ বা মিলাদ পড়া বলা হয় । দেখুন আল্লাহ কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন:
و ذكرهم بأيام الله এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) ক্বাতাদাহ (রাঃ) ব্যাখ্যা করেন :
عن ابن عباس ، عن أبي بن كعب ، عن النبي ، صلى الله عليه وسلم ، في قوله تبارك وتعالى : ( وذكرهم بأيام الله ) قال : " بنعم الله تبارك وتعالى
আল্লাহ অত্র আয়াতে যে أيام الله বলেছেন অর্থাৎ আল্লাহ’র নেয়ামতের যিকির তথা স্মরণ করান । এই আয়াতে স্পষ্ট নির্দেশ করেছেন যে আল্লাহ’র নেয়ামতের স্মরণ করতে হবে । আর মুমিন বলতেই সকলের জানা ও বিশ্বাস যে সকল নেয়ামতের প্রধান নেয়ামন , সকল নেয়ামতের উৎস ,সকল নেয়ামতের বড় নেয়ামত নেয়মাতুল্লাহিল কুবরা ( نعمة الله الكبرى ) হচ্ছেন আমাদের নবী (দ.) আর তাই আমরা আল্লাহর হুকুম পালনের জন্যেই বড় নেয়ামত নবী উলাআহ’র স্মরণার্থে মিলাদ পড়ি । আসুন আরও হুকুম দেখি আল্লাহ পাক সুরা দ্বোহা’তে বলেন:
وأما بنعمة ربك فحدث এই আয়াতের ব্যাখ্যা ইমামে ত্বাবারী ব্যাখ্যা করেন:
وأما بنعمة ربك فحدث أي انشر ما أنعم الله عليك بالشكر والثناء . والتحدث بنعم الله
তোমাদের রবের পক্ষ থেকে পাওয়া নেয়ামতের প্রকাশের মাধ্যমে তার শুকুরিয়া আদায় ও প্রশংসা এবং والتحدث بنعم الله মানে আল্লাহ’র নেয়ামতের আলোচনা করুণ ।
এবার আসুন হাদীসের দিকে তালে দেখতে পাবো যে স্বয়ং রাসুলে আরাবী (দ.) নিজের মিলাদের খুশী আনন্দ করেছেন মানে পালন করেছেন । সহীহ মুসলিমের হাদীস রাসুলে আরাবী (দ.) প্রতি সোমবারে রোজা রেখে ইয়াওমে মিলাদ পালন করতেন । ওয়াহাবীদের আবার এই ক্ষেত্রে অযৌক্তিক প্রশ্ন আছে সেটা হল আপনারা তাহলে রোজা রাখেন না কেন ? সুন্দর প্রশ্ন ! আমাদের জবাবও খুব সুন্দর আছে আলহামদুলিল্লাহ ! রাসুল (দ.) আমাদের যেন অধিক কষ্ট না হয়ে যায় সে জন্য যেমন ঈদে মিলাদুন নবী (দ.) উপলক্ষে এই ঈদে নামাজ ওয়াজিব করেননি, তেমনি রোজাকেও হুকুম করেননি যদি করতেন তাহলে ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হয়ে যেত; যার যেভাবে সহজ সে সেভাবেই করবে ।
তাদের প্রশ্ন নবীজীর (দ.) জন্য আপনাদের এতো মায়া মহব্বত তো সাহাবায়ে কেরামকি কম মহব্বত করতেন ? তারা কেন পালন করেননি ?
সুন্দর প্রশ্ন ! আলহামদুলিল্লাহ তাদের প্রশ্ন করার আগেই আমাদের কাছে এমন জবাব থাকে যা শুনলে ওদের হার্ট ফেল করতে বেশী সময় লাগবেনা । তারা (সাহাবায়ে কেরাম ) পালন করেননি এটা কে বলেছে ? শুধু করতেনই নয় বরং তারা তো আনন্দ তথা ঈদ প্রতিদিনের প্রতি ঘণ্টার প্রতি মুহূর্তেই করতেন তারা সারাক্ষণ নূর নবী (দ.) দরবারে ভিড় করে থাকতেন , তাদের অন্তরে যতই কষ্ট বিপদ অশান্তি আসতইনা কেন যেই নূরের দরবারে উপস্থিত হতেন নূরের চেহেরা মুবারাক দেখা মাত্রই অন্তরের সকল দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যেতো যদি কাঁদতে কাঁদতে আসতেন তো নূরের দরবার থেকে হাসতে হাসতে বাড়ী ফিরতেন সুবহানাল্লাহ । তাই সাহাবায়ে কেরামের ঈদ প্রতি মূহূর্তেই হতো যদিও নাদানরা বুঝার ক্ষমতা রাখেনা ।
এবার দেখুন সাহাবায়ে কেরাম আমাদের মতো অনেককে নিয়ে এক যায়গাতে জমায়েত হয়ে মিলাদ (জন্ম মুবারাকের আলোচনা ) পড়তেন কিনা তাঁর দলীল হাদীসের আলোকে দেখি । সাহাবায়ে কেরাম যখনই সুযোগ পেতেন তখনি লোকজনকে নিয়ে , পরিবারের সকল সদস্যদের এক জায়গায় জমায়েত করে জিকরে মিলাদ , মিলাদুন নবী (দ.) আলোচনা করতেন তথা মিলাদ পড়তেন । এব্যাপারে হাদীসে পাক থেকে দলীল দুটো দলীল দিচ্ছি ।
☆ইমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মাক্কির (রঃ) সঙ্গি আবদুল হক মুহাদ্দিস এলাহাবাদী (দেহলভী নয় ) যার লক্বব শায়খুদ দালায়েল তিনি তার রচিত আদ দুররুল মুনাজযযাম কিতাবে সাহাবায়ে কেরামের মিলাদ পড়ার বিষয়ে দুটো হাদীস শরীফ নকল করেন:
(১) সাইয়্যেদুনা আব্বাস (রাঃ) তাঁর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিত করে রাসুলে আরাবী’র (দ.) পবিত্র জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন তথা মিলাদ পড়ছিলেন তখন রাসুলে আরাবী (দ.) পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আওয়াজ পেয়ে সেখানে উপস্থি হন আর জিজ্ঞেস করেন কি হচ্ছে ? তখন আব্বাস (রাঃ) বললেন আপনার পবিত্র জন্ম বৃত্তান্তের ঘটনাবলী শুনাচ্ছি তথা মিলাদ পড়ছি তখন রাসুলে আরাবী (দ.) বললেন তোমার উপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেছে । সুবহানাল্লাহ ।এই হাদীস দ্বারা প্রমানীত যারা নবীজীর (দ.) মিলাদ পড়বে তাদের উপর জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে ।
(২) একই কিতাবে আরেকটি হাদীসে: সাহাবায়ে কেরাম এক জায়গাতে জমায়েত হয়ে মিলাদের আলোচনা কর ছিলেন আর বলছিলেন ‘’’ আজকের দিন !!! আজকের দিন !!!! ‘’’ তখন রাসুলে আরাবী’র (দ.) জিজ্ঞেস করলেন কি হচ্ছে ? তারা বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনার মিলাদের আলোচনা তথা মিলাদ পড়ছি ! রাসুলে আরাবী (দ.) তাদেরকে জান্নাতের শুভসংবাদ দিয়ে বললেন তোমাদের উপর আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে । তাহলে নুসেসে হাদীসের দ্বারা এটাও প্রমাণিত যারা রাসুলে আরাবী’র (দ.) মিলাদের আলোচনা তথা ইদে মিলাদুন নবী (দ.) উদযাপন / পালন করবে তাদের জন্য রাসুলে আরাবী’র (দ.) শাফায়াত যেমন ওয়াজিব তেমনি জান্নাতও ওয়াজিব হয়ে যায় । { মন ভরা দুঃখ ওয়াহাবীদের বুঝাই কি করে }
☆তারীখের (ইতিহাস) কিতাব থেকে জেনে নেই: রাসুলের (দ.) আগমনে তথা মিলাদে কারা কারা খুশী হয়ে ছিল আর কে নারাজ হয়ে কেঁদেছিল।
আল বেদায়া ওয়ান নেহায়াতে ইবনে কাছীর (রঃ) লিখেন: যেদিন রাসুলে আরাবী (দ.) দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছিলেন ফেরেশতারা আনন্দ প্রকাশ করছিল , হূররাও আনন্দ করছিল বাগ বাগিচার পাখিরা এবং বনের সকল প্রানিও পরস্পর পরস্পরকে আনন্দে মুবারাক বাদ দিচ্ছিল কেবল হতভাগা ঠায় দাড়িয়ে কেবল কাঁদছিল সে লানত প্রাপ্ত ইবলিশ শয়তান । ঠিক আমরা নবীর প্রকৃত আশেকরা মিলাদের মাসে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই আমাদের অন্তরে আনন্দের হিল্লোল পরে যায় আমরা আনন্দ তথা ঈদ মিলাদ পালন করি কেবল কাঁদে সেই ইবলিশ ও তার বংশধর ওয়াহাবী ও লামাযহাবীরা । তারা এই মহিমান্বিত বরকতপূর্ন মাসে কাঁদতে কাঁদতে মরে আর আমরা আনন্দে আনন্দে বাঁচি আলহামদু লিল্লাহ ।
আসুন এবার আমরা কিছু প্রশ্নের জবাব নেই যদিয় জবাবগূলো পোষ্টের মধ্য থেকেই দিবো কিন্ত গোটা বিষয় এক সঙ্গে পড়ার কারনে সেখানে বিপক্ষের লোকদের কোন প্রশ্নের জবাব কোনটি হবে এবং তাদেরকে দাঁত ভাঙ্গা জয়াব যেন সর্বসাধারণের সকলেই দিতে পারে সে জন্যে এখানে প্রশ্ন উত্তরের আঙ্গিকে আলাদা ভাবে তুলে ধরছি ।
এই ঈদ কোন ঈদ ? ঈদ তো শরীয়তে কেবল দুটিই !
উত্তরঃ যে বলবে শরীয়তে দুই ইদ ছাড়া কোন ইদ নেই তার ঈমান থাকবে না কারন হাদীস অস্বীকার কারি সকল ঈমামের ঐক্যমতে কাফের এবার । এবার হাদিস দেখুন:
قال رسول الله صل الله عليه وسلم ان هذا يم عيد جعله الله للمسلمين فمن جاء الجمعة فليغتسل = رواه ابن ماجه صححه الألبانى
ইবনে মাযাহ হাদিসের কিতাবে সহীহ সনদে বর্ণীত রাসুলে আরাবী ৯সাঃ) বলেছেন নিশ্চয়ই এই দিনটি ( জুমা ) আল্লাহ সকল মুসলমানের জন্য ঈদের দিন করে দিয়েছেন যে এই দিনতি পাবে সে যন গোসল করে । হাদীসিটিকে ওয়াহাবী ও লামযহাবিদের গ্রহণযোগ্য কট্টরপন্থী ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ সহঈহ বলেছে । তাহলে এটা স্পষ্ট কেহ যদি বলে শরীয়তে দুই ইদ ছাড়া কোন ঈদ নেই ! হাদীস অস্বীকার করার কারনে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে ।
সাহাবায়ে কেরাম কেন পালন করেন নি ওনাদের কি মহব্বত কম ছিল ? তাদের নিকট আমাদের প্রশ্ন সাহাবায়ে কেরাম যাহা করেনি তাই কি পরিত্যাজ্য ? এর দলীল কি ? এমন কথা শরীয়তের কোথাও বলা নেই যে সাহাবায়ে কেরাম যা করেননি তা করা যাবে না । হাদীসের নির্দেশ :
عن أبي هريرة عبدالرحمن بن صخرٍ رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ((ما نهيتُكم عنه فاجتنبوه، وما أمرتكم به فَأْتُوا منه ما استطعتم؛ فإنما أهلك الذين من قبلكم كثرةُ مسائلهم، واختلافُهم على أنبيائهم))؛ رواه البخاري ومسلمٌ
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত হাদীস রাসুলে আরাবী (দ.) বলেছেন আমি তোমাদের যা নিষেধ করেছি তা তোমরা বর্জন কর এবং যাকিছু আদেশ করেছি তা সাধ্যানুযায়ী তা গ্রহণ কর । তাহলে এতা স্পষ্ট যে আদেশ মানতে হবে নিষেধ ছাড়তে হবে একটি অবস্থা বাকি থাকে যেটা নিষেধও করেননি আদেশও করেননি সেটা ভালো হলে করার অনুমতি আছে যদি সেটা দীন হিসেবে সাওয়াবের নিয়তেও করা হয় যেটা হাদীসে পাকের নির্দেশ :
وكما قال ابن مسعود رضي الله عنه : " ما رآه المسلمون حسناً فهو عند الله حسن
অর্থাৎ মুসলমানদের নিকট যে কাজটি পছন্দনীয় আল্লাহ’র নিকটেও সেটা পছেন্দের ।
কোন জ্ঞানীর নিকট এটা অস্পষ্ট নয় যে যেটা আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় সেটা অবশ্যই সাওয়াবের কাজ । তারপরেও প্রশ্ন থেকেই যায় যেহেতু মিলাদের দিনটি ঈদেরই দিন তো সাহাবায়ে কেরাম কেন করেননি ? আমার জবাব করেননি কে বলেছে ? আমিতো বলি সাহাবায়ে কেরাম যদিও আমদের মতো শুধু মিলাদের দিনেই নয় বরং সাহাবায়ে কেরাম আনন্দ তথা ঈদ প্রতিদিনের প্রতি ঘণ্টার প্রতি মুহূর্তেই করতেন তারা সারাক্ষণ নূর নবী (দ.) দরবারে ভিড় করে থাকতেন , ধরাতে নবী (দ.) আগমনের আনন্দে সর্বদাই তারা মাতওয়ারা হয়ে থাকেতেন ।আমরা দুনিয়াদার গুনাহগার উম্মতরা দুনিয়ার বেস্ততায় গাফিলতি করলেও বছরে কখনো কখনো বিশেষ দিনগুলোতে করে থাকি তথা সাহাবায়ে কেরাম সবসময় করতেন , আমরা কখনো কখনো আর তারা ( ওয়াহাবী ) কখনোই না । ওরা পোড়া কপাল ।
কোন দিনকে নির্দিষ্ট করে পালন করা ইসলামে নেই এটা খৃষ্টান ও ইয়াহুদিদের কাজ নাউযুবিল্লাহ ।
উত্তরঃ স্বয়ং আল্লাহ কেবল দিন নির্দিষ্টই নয় বরং মিলাদের দিনকে নির্দিষ্ট করে নবীদের উপর শান্তি বর্ষণ করেছেন । সুরা মারিয়ামের ১৫ নং আয়াত তার প্রমাণ । আল্লাহ তার নবী ইয়াহিয়ার (আঃ) উপর তার মিলাদের দিনকে নির্দিষ্ট করে শান্তি বর্ষণ করেন । এরাদ্বারা প্রমাণিত যে নবীদের মিলাদের দিনে তাদের উপর বিশেষ ভাবে সালাম পাঠানোর নিয়ম কুরআনেই আছে তাই এই ক্ষেত্রে কুরুনে ছালাছার (তিন যুগ ) দলীল বা আমল দেখার প্রয়োজনীয়তা রাখে না ।
যা আজকে প্রথম শুনলাম এক ভাইয়ের মাধ্যমে সেটা হলে ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম তো নাবিজী (দ.) ঐদিন রোজা কেন রাখতেন ?
উত্তরঃ তাদের নিকট আমারও কিছু প্রশ্ন তাহলে কি তারা নবীদের মিলাদের দিনকে ঈদ তথা আনন্দের দিন মানতে রাজী নয় ? দ্বিতীয় প্রশ্ন সরাসরি ইবনু মাযাহ ও মেশকাতের সহিহ সনদে বর্ণীত জুম্মার দিন তো ঈদ সকলেই মানতে বাধ্য তাহলে সেই দিন (শুক্রবার ) কি রোজা রাখা হারাম কেহ রোজা রাখলে কি গুনাহ হবে ? আশাকরি তারা তাদের মৃত্যু অবধি এর জবাব দিতে পারবেনা । আলহামদুলিল্লাহ আমি তাদের জবাব দিচ্ছি ।
ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আদ্বহা সহ আইয়্যামে তাশরীকের দীনগুলো ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ নয় বরং সেগুলো আল্লাহ ইসলামের শেয়ার (شعار اسلام ) হিসেবে আনন্দ করা ফরজ করেছেন রোজা রাখা হারাম করেছেন তাই সেই দিনগুলোতে রোজা রাখা হারাম কিন্ত মিলাদুন নবীর (দ.) ঈদ তথা আনন্দ শেয়ারে ইসলা নয় বরং ভালবাসার বহিঃপ্রকাশে আনন্দ করা যাহা শরীয়তের হুকুমে ফরজ নয় বরং মুস্তাহাব ইচ্ছে করলে কেহ আনন্দ উদযাপন করবে না করলে গুনাহ নেই যেহেতু ফরজ / ওয়াজিব নয় ! তবে সাবধান অস্বীকার করলে ১০০% ঈমান যাবে ।
এট যদি ঈদ হয়েই থাকে তাহলে নামাজ নেই কেন ? আবার অনেক অসভ্য বেয়াদব কটাক্ষ করে আমাদের প্রশ্ন করে থাকে যে আপনাদের ঈদের জামায়াত কয়টায় ?
উত্তরঃ প্রথমেই আমকে বলে নিতে হচ্ছে যে নবীজীর আগমনের আনন্দ প্রকাশের ঈদ আর শেয়ারে ইসলামের ঈদের মধ্যে পার্থক্য আছে হুকুমের মধ্যেও যে পার্থক্য আছে এতোটুকুন জ্ঞান যারা কুরআন হাদীস থেকে অন্বেষণ করতে পারেনি বা তাদের ওস্তাদরাও সেই গভীর জ্ঞান তাদের দিতে পারেনি সেটাই তাদের বড় ব্যর্থতা । আসুন এবার ইদুল ফিতর , ইদুল আদ্বহাতে নামাজ আছে আর ঈদে মিলাদুন নবীতে (দ.) নামাজ না থাকার শরয়ী কারন কি ? আশা করি মুর্খের দলেরা ভবিষ্যতে আর কখনো নামাজ ও নামেজের জামায়াতের কথা জিজ্ঞেস করবে না ।
জবাবঃ দুই ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের তিনটি মত (১) যথা সুন্নাত হাদীসে পাকে এসেছে:
إنها سنة؛ لأن الأعرابي الذي سأل النبي صلى الله عليه وآله وسلم، لما أخبره عن الصلوات الخمس قال: هل علي غيرها؟ قال: "لا، إلا أن تطوع
এই হাদিসের আলোকে ঈদের জামায়াতকে সুন্নাত বল হয়েছে ।
(২) কারো মতে ফরযে কেফায়াহ তারা তারা বলেন ,
ومنهم مَن قال: إنها فرض كفاية، وقال: إنها من شعائر الإسلام الظاهرة، ولهذا تفعل جماعة وتفعل في الصحراء، وما كان من الشعائر الظاهرة فهو فرض كفاية كالأذان.
তাদের মতে ঈদের নামাজ ইসলামের শেয়ার তথা নিদর্শন । তাই এ নামাযের জামায়াতও হবে এবং তা ময়দানেই হতে হবে ।
(৩ ) কারো মতে ফরযে আঈন । যে হাদীস পাককে গ্রহণ করেছেন:
لأن النبي صلى الله عليه وآله وسلم، أمر بها حتى النساء الحيض، وذوات الخدور، والعواتق أمرهنَّ أن يخرجنَّ إلى مصلى العيد، وهذا القول أقرب الأقوال، وهو اختيار شيخ الإسلام ابن تيمية رحمه الله أنها "فرض عين
অর্থাৎ নবী (দ.) ঈদের নামাজে উপস্থিত হতে নির্দেশ করেন এমনকি যে মহিলারা মাসিক অবস্থায় আছে তারাও এই হাদীসে পাকের আলোকে কট্টর পন্থী ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (লামাযহাবীদের গ্রহণযোগ্য ইমাম ) ঈদের নামাজকে ফরযে আঈন বলেছেন । তাহলে স্পষ্ট হয়েগেছে যে দুই ঈদের নামাজ যেহেতু কারো নিকতে সুন্নাত কারো নিকটে ফরযে কেফায়াহ কারো মতে ফরযে আঈন তাই পরা অত্যাবশ্যক ।
কিন্তু পবিত্র ঈদে মিলাদুন নবী (দ.) ঈদ তথা আনন্দ শেয়ার নয় বরং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ( اظهار المحبة ) তাই এই ঈদে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে কেবল আনন্দ করারই হুকুম আছে নামাজের নয় তাই নামাজও নেই জামায়াতও নেই । যে আনন্দ স্বয়ং আল্লাহ সুরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে করতে বলেন :
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
পরিশেষে একটি মূল কথা সকলের খেদমতে উপস্থাপন করেই সমাপ্ত করতে যাচ্ছি সেটা হলো :
যতো আমল আমরা সুন্নি তথা আহলে হক্বের যারা করি এবং আমাদের বিপক্ষের লোকেরা করে থাকে সকলের কাজেরই মূল ( اصل ) কুরআন হাদীস ইজমা কিয়াছে আছে। তবে সেই আমলগুলোর তরীকা বা পদ্ধতি নূতন হওয়ায় তা হারাম বা নাজায়েজ এবং বিদয়াত হবে না । যেমন আগে তাদের আমলগুলোই উপস্থাপন করছি । সামগ্রিকভাবে তাবলীগকে অস্বীকার করা যাবে না তাতে ঈমান চলে যাবে কারন তাবলিগ করা ফরয যে মূল তাবলীগ রাসুলে আরাবী (দ.) থেকেই চলে এসেছে তা কেয়ামত অবধি চলতেই থাকবে। কিন্তু বর্তমান তাবলীগে যে নূতন পদ্ধতি চালু হয়েছে ( ইলিয়াস মেওয়াতীর স্বপ্নে পাওয়া ) মাত্র ৭০/৭৫ বছর যাবত আমরা তাদের সেই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন করতে পারি দলীল ভিত্তিক নাজায়েজও বলার অবকাশ রাখে । আবার দেখুন লামাযহাবীদের ক্ষেত্রে যেটা তারাও গোটা দুনিয়া ব্যাপী দীন প্রচারে দাবী করছে সেই দীনকেও সামগ্রিকভাবে অস্বীকার করা যাবেনা ঈমান চলে যাবে কিন্তু তাদের নূতন পদ্ধতি নিয়া আমাদের প্রশ্ন করার সুযোগ আছে কুরআন হাদীসের আলোকে হারামও বলতে পারি যেমন তাদের নব আবিষ্কৃত পদ্ধতির মধ্যে উন্মুক্ত পরিবেশে শরয়ী পর্দার বেবস্থা ছাড়াই হাজারো লোকের সামনে বেগানা মহিলাদের উপস্থিত করে প্রশ্ন উত্তর দেয়া প্রশ্ন কারি উত্তর দাতা এবং সর্ব বয়সের মানুষের দৃষ্টি দেয়া নেয়া কথা বলা যা সরাসরি সরীয়ত বিরোধী হারাম কাজ । তেমনি সামগ্রিকভাবে অস্বীকার ঈদে মিলাদুন নবীকেও (দ.) অস্বীকার করা যাবেনা তাতে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে কারন নাছছে মিলাদ কুরআন হাদীসেই আছে পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তা নিয়া বসতে পারেন বাহাস মুবাহাসা হইতে পারে । সে সুযোগ আছে কিন্ত অস্বীকার করার ক্ষমতা নেই । আরেকটি কথা না বললেই নয় সেটা হচ্ছে ওয়াহাবীদের সকল আক্বাবিররা মিলাদ কেয়াম করেছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন নবী (দ.) পালন করেছেন ! কিন্ত মজার বিষয় হচ্ছে নবীজীর (দ.) শান মান মহব্বতের ক্ষেত্রে দঈল দিলেই তাদের সোজা উত্তর তারা দলীল নয় কিন্ত আফসোস আমরা তাদেরকে পেঁচে ফেলিনা । সেটা হল তারা দলীল নয় এটা বলে বাঁচার পথ নেই তাদের একটা কথা স্পষ্ট মুয়খ থেকে বের করা তে হবে যে ঠিক আছে তারা দলীল নয় মেনে নিলাম তবে এটা বল তোমরা যদি আমাদের এই আমলগুলোকে হারাম বা বিদয়াত বল তাহলে এটা স্বীকার করে নাও যে আক্বাবিররা হারাম বিদয়াত করেছেন আর كل بدعة ضلالة و كل ضلالة فى النار সকল নব আবিষ্কার গোমরাহি আর সকল গমরাহি জাহান্নামী’র দলীলে আপনাদের সাক্বাবিররা কি গোমরাহ এবং জাহান্নামী ছিলেন যদি স্বীকার করেনেন তাহলে আমাদের বলার কিছুই নেই আর যদি বলেন না তাহলে বুঝাতে হবে হারাম কি কারো কারো জন্য হয় শরীয়তের হুকুম বেক্তি বিশেষ পরিবর্তন হয় ? নাউযুবিল্লাহ । যদি নাহয় তাহলে ওনারা কেন কি ভেবে করেছেন তাও স্পষ্ট করতে হবে । কেবল আক্বাবির দলীল বললেই ছাড় পাওয়া যাবেনা বলতে হবে ওনারা কি মনে করে কেন করেছেন । আর যদি ওনারা বিদয়াতিই হয়ে থাকেন তাহলে বিদয়াতির / জাহান্নামিদের হাতে হাঈসের সনদ নেওয়াও জায়েজ নেই তিরীকার বাইয়াত নেওয়াও জায়েজ নেই । তাহলে আপনাদের বক্তব্বে থানুভী গাঙ্গগুহী সহ আপনাদের সকল আক্বাবির সিরেতাজদের সনদও বাদ ( منقطع السند) এনং তরিকতের ধারাবাহিকতাও বিচ্ছিন্ন।
লেখক: মুহা, আহসানুল্লাহ আব্বাসী।
ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মদিনা।
আরও পড়ুন:
No comments:
Post a Comment