ইসলামে নারীর মর্যাদা

ইসলামে নারীর মর্যাদা 

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আবির্ভাবের পূর্বে  নারীদের অবস্থায় ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। ইসলাম পূর্ব যুগে নারীদের কে শুধু ভোগের সামগ্রী হিসাবে ব্যবহার করা হত। তারা ছিল সমাজে, পরিবারে নিতান্ত নিকৃষ্ট। তাদের কোন অধিকার ছিলনা। এমন কি মেয়ের জন্ম হলে পিতা কন্যা সন্তানকে জীবন্ত মাটির নীচে পুতে দিত এ কলঙ্ক ঢাকার জন্য। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে এমন বর্ণনা আছে:  মৃত্যু, নরক, আগুন, বিষ, সর্প এর কোনটি নারীর অপেক্ষা মারান্তক নয়। যুবতী নারীকে প্রতিমার উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হত দেবতার সন্তুষ্টির জন্য, বৃষ্টি ধন -দৌলত লাভের জন্য। স্বামীর মৃত্যুর সাথে স্ত্রী সহ মৃত্যু বরণ বা সতীদাহ পালন হিন্দু সমাজের রীতি। নারীকে সকল পাপ অন্যায় ও অপবিত্রতার কেন্দ্র বা উৎস বলে ঘৃণা করা হত। তারা বলতো: নারী হচ্ছে শয়তানের বাহন। নারীরা হচ্ছে এমন বিষধর সাপ যা পুরুষকে দংশন করতে কখনো কসুর করে না।

এথেন্স বাসিরা সভ্যতা ও সংস্কৃতির ইতিহাসে উল্লেখ্য যোগ্য প্রাচীনতম জাতী। সেখানেও নারীকে পরিত্যক্ত সামগ্রীর মতো মনে করা হতো। বাজারে প্রকাশ্য ভাবে নারীর বেচাকেনা হতো। সন্তান প্রসব লালন- পালন ছাড়া
অন্য কোন মানবীয় অধিকারই তাদের ছিল না। আইনত একাধিক স্ত্রী গ্রহন নিষিদ্ধ থাকলেও কার্যত প্রায় পুরুষই একাধিক স্ত্রী রাখতো।

ইয়াহুদী সমাজে নারীদের অবস্থা ছিল আরো মারাত্নক । কিতুব নামক এই ইয়াহুদী বাদশাহ আইন জারি করেছিল, যে মেয়েকেই বিয়ে দেয়া হবে স্বামীর দ্বারে যাওয়ার পূর্বে তাকে বাধ্যতামূলক ভাবে বাদশাহর সঙ্গে একরাত্রী যাপন করতে হবে। 

খৃষ্টানরা তো নারীকে চরম লাঞ্চনার নিম্নতম পংকে নিমজ্জত করে দিয়েছে। জনৈক পাদ্রীর মতে: নারীই হচ্ছে শয়তানের প্রবেশ স্থল। তারা আল্লাহর মান মর্যাদা প্রতিবন্ধক। আলাহর প্রতিরূপমানুষের পক্ষে তারা বিষজনক ।নারী সব অন্যায়ের মূল। তার থেকে দূরে থাকাই বঞ্চনীয়। নারী হচ্ছে পুরুষের মনে লালসা উদ্রেক কারিণী। ঘরে ও সমাজে যত অশান্তির সৃষ্টি হয় সব নারীরই কারণে। এমন কি নারী কেবল দেহ সর্বস্ব, না তার প্রাণ বলতে কিছু আছে?  এ প্রশ্নের মীমাংসার জন্য পঞ্চম খৃষ্টাব্দে বড়ো বড়ো খৃষ্টান পাদ্রীদের এক কনফারেস বসেছিল মাকুন নামের এক জায়গায়। 

সভ্যতার ধব্জাধারী ইংরেজদের দেশে ১৮০৫ সন পর্যন্ত আইন ছিল যে পুরুষ তার স্ত্রীকে বিক্রয় করতে পারবে। অনেক ক্ষেত্রে একজন স্ত্রীর মূল্য অর্ধ শিলিংও ধরা হতো। যার মুল্য বর্তমান বাজার দর হিসাবে মাত্র কয়েক পয়সা। এক ইটালিয়ান তার স্ত্রীকে কিস্তি হিসাবে আদায়ব্য মূল্যে বিক্রয় করেছিল। পরে ক্রয়কারী কিস্তির টাকা পরিশোধে অস্বীকার করে। তখন বিক্রয়কারী স্বামী তাকে হত্যা করে। 
অষ্টাদশ খৃষ্টাব্দের শেষ ভাগে ফরাসী পার্লামেন্টে মানুষের দাম প্রথার বিরুদ্ধে যে আইন পাশ হয় তার মধ্যে নারীকে গণ্য করা হয়নি। কেননা,  অবিবাহিতা নারী সম্পর্কে কোন কিছু করা যেতো না তাদের  অনুমতি ছাড়া। 

৫৮৬ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাতের বহু চিন্তা- ভাবনা আলোচনা গবেষণা ও  তর্ক – বিতর্কের পর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে নারী জন্তু নয় মানুষ। তবে সে এমন যে পুরুষদের  কাজে নিরন্তর সেবিকা হয়ে থাকারই যোগ্য। এগুলো ছিল তাদের স্থির বিশ্বাস ও মজ্জাগত আকীদা।
গ্রীকদের দৃষ্টিতে নারীর কি মর্যাদা ছিল তাদের একটা কথা থেকেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়,
আগুনে জ্বলে গেলে কিংবা দংশন করলে তার প্রতি বিধান সম্ভব কিন্তু নারীর দুষ্কৃতির প্রতি বিধান অসম্ভব। 

পারস্যবাসীদের মতে: দুনিয়ার সব অনিষ্টের মূল উৎস হচ্ছে, দুটি (১) নারী (২) ধন-সম্পদ।
প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থা অন্যান্য সমাজের তুলনায় অধিক নিকৃষ্ট ছিল। প্রাচীন ভারতের প্রখ্যাত আইন রচিয়তা মনুমহারাজ নারী সম্পর্কে বলেছেন: নারী না – বালগা হোক যুবতী হোক আর বৃদ্ধা হোক নিজ ঘরেও স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে না। মিথ্যা বলা নারীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য। চিন্তা না করে কাজ করা ধোকা – প্রতারণা নিরবুদ্ধিতা ,লোভ- পংকিলতা, নির্দমতা ইত্যাদি হচ্ছে নারীর স্বভাব গত দোষ। 

প্রাচীন আরব সমাজেও নারীর অবস্থা ছিল লজ্জাস্কর। কন্যা সন্তানের জন্মকে বড়ই লজ্জার কারন ভেবে তাকে জীবন্ত কবর দিয়ে দিত। আর জীবিত রাখলেও তাকে মানবোচিত কোন অধিকারই দেয়া হত না। নারী যত দিন জীবিত থাকতো , স্বামীর দাসী হয়ে থাকত। স্বামী মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীরাই অন্যান্য বিষয়ের মত তারও একচ্ছত্র মালিক হয়ে বসত। সৎ মা বা পিতার স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী বানানো সে সমাজে কোন লজ্জা বা আপত্তির বিষয় ছিল না। বরং তার ব্যাপক প্রচলন ছিল। আলামা আবু বকর আল জাসাস লিখছেনঃ জাহিলিয়াতের যুগে পিতার স্ত্রী বা সৎমাকে বিয়ে করার ব্যাপক প্রচলন ছিল । ( আহকামুল কুরআন)

পাশ্চাত্য সভ্যতায় নারীকে শয়তানের দালাল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এভাবে নারী জাতির উপর 
চলছিল নির্যাতন ও অমানুষিক বর্বরোচিত অত্যাচার। ইসলামই একমাত্র গোটা বিশ্বের নির্যাতিতা  নারীদেরকে এহেন করুন অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে সমাজে, রাষ্ট্রে।ঘরেও ন্যায্য  অধিকার এবং সমানের চরম শিখরে উঠিয়েছে। পিতার সম্পদের অধিকারী করেছে। যে নারীকে  মাসিক ঋতুতে ঘরের বাহিরে ফেলে রাখা হতো , একত্রে থাকা – খাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো, তাদের সেই অধিকার কে ফিরিয়ে দিয়েছে সম্যক রূপে। যে মহা মানবের আবির্ভাবের ফলে নারী জাতির এ সকল অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে, তিনিই মানবতার মুক্তির দিশারী রাহমাতুল লিল আলামীন, নবীগণের সর্দার হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ধরায় আগমন করে মানবতার মুক্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যে বিপ্লবী বাণী  শুনিয়েছেন , তাতে যুগান্তকালের পংকিলতা ও পাশবিকতা দূরীভূত হয়ে , জুলুম ও অমানুষিক  নির্যাতনের প্রবণতা নিঃশেষ হয়ে, মানব সমাজে যথাযথ সম্মান বোধ ও যথাযোগ্য মর্যাদা বোধ প্রতিষ্ঠিতহয়েছে। নারী মানবতা ও অধিকারের পর্যায়ে পুরুষদের  সমান বলে গণ্য হয়েছে। বরং অনেক ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের তুলনায় বেশী অধিকার দেয়া হয়েছে।

বলা বাহুল্য কুরআন  হাদিসই একমাত্র কিতাব, যা কি নারীদেরকে যুগ যুগ কালের অপমান ,  লাঞ্চনা ও হীনতা – নিচতার পুঞ্জীবূত স্তুপের জঞ্জাল থেকে চির দিনের জন্য মুক্তি দান করেছে এবং সঠিক ও যথোপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুছে দিয়েছে তার ললাটস্থ দীর্ঘকালের অসহায়ত্বের মলিন রেখা। ইসলামই নারীকে সঠিক মানবতার মূল্য দান করেছে। মাতৃ জাতি সম্পর্কে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, নারী জাতি সমাজের অর্ধাংশ এবং অর্ধাঙ্গিনী। ( আল হাদিস)

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরো ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দু, টি মাত্র মেয়েরও সুন্দর রূপে ভরণ- পোষণ ও প্রতিপালন করবে, সে বেহেশ্তে আমার এত নিকটবর্তী হবে, যেরূপ হাতের আঙ্গুল সমূহ পরস্পর নিকটবর্তী। ( মুসলিম শরীফ)  চলবে.......

সংগৃহীত


আরও পড়ুন:


No comments:

Post a Comment