রাসুল (দ.) এর রওজা যিয়ারত (ফতোয়া ও নিয়ম)
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا
أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ
لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا
′আর যদি তারা নিজেদের ওপর জুলুম করার পর আপনার নিকট আসে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় এবং রাসুল (দ.)ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাহলে তারা আল্লাহ তায়ালাকে অতিশয় তাওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু হিসেবে পাবে।′[1]
★আলোচ্য আয়াতের মূল বক্তব্য হলো :
যে সকল মানুষ নানা কারণে অপরাধী হয়ে নবী (দ.) এর দরবারে উপস্থিত গয়ে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও তার নিজের পাপের মার্জনা চায়; তবে আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করে নেন এবং ক্ষমা করে দেন। তবে তাদের তাওবা করার শর্ত হলো:
যে সকল মানুষ নানা কারণে অপরাধী হয়ে নবী (দ.) এর দরবারে উপস্থিত গয়ে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে ও তার নিজের পাপের মার্জনা চায়; তবে আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করে নেন এবং ক্ষমা করে দেন। তবে তাদের তাওবা করার শর্ত হলো:
১. তাদেরকে আপনার নিকট (রওযা মোবারকে) এসে তাওবা করা।
২. আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৩. রাসুল (দ.) তাদের জন্য ক্ষমার সুপারিশ করা।
যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর:
যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বিশেষ সফর ইসলামী শরীয়াহ সমর্থিত একটি বৈধ বিষয়। নবী করিম (দ.) ও সাহাবা কেরাম জান্নাতুল বাকী এবং উহুদে শহীদদের কবর যিয়ারত করতেন। নবী করিম (দ.) কে শবে বরাতে হযরত আয়েশা (রা.) জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দুআ করা অবস্থায় পেয়েছিলেন।[২] ইমাম নববী ও বায়হাকী (র.) নবী করিম (দ.) এর রওজা শরীফ যিয়ারতকে আবু দাউদ শরীফে সহীহ সনদে বর্ণিত হাদীসের আলোকে শরীয়ত সমর্থিত বিষয় বলে দাবী করেছেন। হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে:
ما من أحد يسلم علي، إلا رد الله عز وجل إلي
روحي حتى أرد عليه السلام
′যে ব্যক্তি আমার প্রতি সালাম পেশ করল, বরং তাৎক্ষনিকভাবে আল্লাহ আমার দেহে রুহ ফিরিয়ে দেন; যাতে আমি তার সালামের জবাব দিতে পারি।′[৩]
রওজা শরীফ যিয়ারত করা এবং সালাম প্রদান করা; একটি প্রাচীন আমল। সহীহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন সফর থেকে ফিরতেন, তখন নবী (দ.) এর রযজা মোবারকে হাজির হতেন এবং তাঁকে, আবু বকর (রা.) ও তাঁর পিতাকে সালাম দিতেন।
রওজা শরীফ যিয়ারতে পদ্ধতি:
★ইমাম আবু হানিফা (রা.) তাঁর মুসনাদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন:
مِنَ السُّنَّةِ أَنْ تَأْتِيَ قَبْرَ
النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قِبَلِ الْقِبْلَةِ
সুন্নত হচ্ছে নবী (দ.) এর রওজায় প্রবেশ করবে কিবলার দিক হতে। তোমার পিঠ কিবলার দিকে এবং মুখমন্ডল রওজার দিকে থাকবে। অতঃপর বলবে: السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ
একটি ঘটনা:
রওযা মোবরকে বেদুঈনের ঘটনা সম্পর্কে হাফিজ ইবনে কাসের (র.) এর বর্ণনা। তিনি বলেন: একটিদল এ ব্যাপারে তার নিকট উল্লেখ করেছে যে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শেখ আবু মানসুর আস সাবাগ তিনি তাঁর কিতাব আশ্ শামেল এ প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। হযরত আতাবী (র.) বলেণ: আমি নবী করিম (দ.) এর রওযা মোবারকে বসেছিলাম। ইতিমধ্যে একজন গ্রামীণ আরবী লোক আসল এবং সে বল্ল: আস্ সালামু আলাইকুম ইয়া রাসুলাল্লাহ। আমি আল্লাহকে বলতে শুনেছি:
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا
আমি আপনার দরবারে এসেছি ক্ষমা প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে ও আমার রবের নিকট আপনার মাধ্যমে সুপারিশ কামনা করছি। অতঃপর সে আরবী দুই লাইন কবিতা আবৃত্তি করল:
অতঃপর আরবী ফিরে গেল। হযরত আতাবী বলেন: আমার চোখে প্রচন্ড ঘুম এসে পড়ল। আমি নবী (দ.) কে স্বপ্নে দেখলাম, তিনি আমাকে বললেন: হে আতাবী তুমি আরবীর নিকট যাও এবং তাকে এ সংবাদ দাও যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
রওজা শরীফ যিয়ারতের ব্যাপারে ইমামদের অভিমত:
★হানাফী মাযহাব: ইমামে আযম আবু হানিফা নো’মান বিন সাবেত (রা.) এবং হানাফী মাযহাবের সকল ইমামদের মতে রওজা মোবরকের উদ্দেশ্যে সফর করা ও যিয়ারত করা মোস্তাহাব। হযরত ইবনুল হুমাম হানাফী (র.) তদ্বীয় কিতাব ফাতহুল কাদীরে বলেন:
قَالَ مَشَايِخُنَا رَحِمَهُمْ اللَّهُ تَعَالَى : مِنْ أَفْضَلِ الْمَنْدُوبَاتِ
′নবী করিম (দ.) এর রওজা শরীফ যিয়ারত প্রসঙ্গে আমাদের শায়েখগণ বলেঝেন: নবী করিম (দ.) এর রওজা যিয়ারত করা একটি উত্তম মুস্তাহাব আমল।′[৪]
★মালেকী মাযহাব: ইমাম মালেক (রা.) নবী করিম (দ.) এর একান্ত আশিক ছিলেন। নবী (দ.) এর প্রত্যেকটি বিষয়ের তাযিম তাঁর চেয়ে বেশী কেউ করতে পারেনি। মদিনার অলি গলি, রাস্তা ঘাট, এর উচু নিচু মাটি পযন্ত তার পরিচিত ছিল। প্রসিদ্ধ মতে, তিনি তাঁর জীবনে কখনো মদীনা মনোয়ারাতে যানবাহসে সাওয়ার হননি। তিনি সহ তার সকল অনুসারীদের মতে, রওজা মোবরক যিয়ারত করা মোস্তাহাব। কাযী আয়াজ তদ্বীয় কিতাব শিফা এ বলেন:
′নবী করিম (দ.) এর রওজা শরীফ যিয়ারত করা মুসলমানদের সুন্নতসমূহের অন্যতম একটি সুনত। এর ওপরে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে যিয়ারতকারীর অনেক উপকারও রয়েছে′
★শাফেয়ী মাযহাব: ইমাম আবু ইসহাক সিরাজী (র.) তদ্বীয় কিতাব আল্ মুহায্যাবে বলেন:
ويستحب زيارة قبر رسول الله صلى الله
عليه وسلم لما روى ابن عمر رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال من
زار قبري وجبت له شفاعتي ويستحب أن يصلي في مسجد رسول الله صلى الله عليه وسلم
لقوله صلى الله عليه وسلم صلاة في مسجدي هذا تعدل ألف صلاة فى غيره من المساجد
′আর রাসুলুল্লাহ (দ.) এর রওযা মোবারক যিয়ারত করা মোস্তাহাব। কেননা, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা,) থেকে বর্নিত। রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেছেন: যে ব্যক্তি আমার রওজা যিয়ারক করল তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। অনুরুভাবে নবী (দ.) এর মসজিদে নামায পড়াও মুস্তাহাব। কেননা, নবী করিম (দ.) বলেছেন: আমার এই মসজিদে নামায পড়লে অন্যান্য মসজিদ থেকে একহাজার গুণ বেশী সাওয়াব হবে।′ [৫]
★হাম্বলী মাযহাব: শেখ কুদামা (র.) বলেন:
ويستحب زيارة قبل النبي صلى الله عليه و سلم لما
روى الدارقطني بإسناده عن ابن عمر قال : [ قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : من
حج فزار قبري بعد وفاتي فكأنما زارني في حياتي ]
′নবী (দ.) এর রওজা যিয়ারত করা মুস্তাহাব। কেননা, এ প্রসঙ্গে দারুকুতনী তার সনদে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা,) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুল (দ.) বলেছে: যে ব্যক্তি হজ্জ্ব করল অতঃপর আমার ওফাতের পরে আমার রওজা যেয়ারত করল, সে যেন আমার জীবিত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাত করল।′[৬]
লেখক: ড. মুহা: কাফীলুদ্দিন সরকার সালেহী।
আরও পড়ুন:
ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপনের দলীল।
১২ ই রবিউল আউয়াল: শোক নয় আনন্দ প্রকাশের মাস।
[১]সুরা নিসা : ৬৪।
[২]জামে তিরমিজী, ১ম খন্ড, হাদীস নং ১৫৬।
[৩]আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৫ম খন্ড, হাদীস নং ১০৫৬৯।
[৪]ফাতহুল কাদীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ: ২৪৬।
[২]জামে তিরমিজী, ১ম খন্ড, হাদীস নং ১৫৬।
[৩]আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৫ম খন্ড, হাদীস নং ১০৫৬৯।
[৪]ফাতহুল কাদীর, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ: ২৪৬।
[৫] আল মুহায্যাব, ১ম খন্ড, পৃ: ২৩৩।
[৬] আল মুগনী, ৩য় খন্ড, পৃ: ৫৯৯।
No comments:
Post a Comment