আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের পরিচয়: ২য় পর্ব
★ছিদ্দীকীন এবং আউলিয়া কিরামগণের আদর্শ অনুসরন সম্পর্কে পবিত্র কুরান মাজীদে সিরাতে মুস্তাকীমের পরিচয় দানের মধ্য দিয়ে এসেছেঃ
اهدنا الصراط المستقيم - صراط الذين أنعمت عليهم
(আল্লাহ তায়ালা যাদের উপর নিয়ামত দিয়েছেন তাঁদের পথ সিরাতে মুস্তাকীম) আর মহান আল্লাহ তায়ালা যাদের উপর নিয়ামত দান করেছেন তাঁরা হচ্ছেন নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখিত আম্বিয়া-মুরছালীন,ছিদ্দীকীন,শোহাদা এবং আউলিয়া কিরাম।
★মহান আল্লাহ বলেনঃ
ومن يطع الله والرسول فأولئك مع الذين أنعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين و حسن أولئك رفيقا
উপরোক্ত আয়াত প্রমাণ করে যে,নাবী-রাসূলগণ,সাহাবা কিরাম এবং আউলিয়া কিরামগণের পথ ও মতের উপর থাকাই হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকীমের উপর থাকা। তাই বলা যায়,আম্বিয়া–মুরছালীন,ছিদ্দীকীন,শোহাদা,রাসুল পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র বংশধর,সাহাবা কিরাম এবং আউলিয়া কিরামগণের পথ ও মতের অনুসরনই হচ্ছে "সিরাতে মুস্তাকীমের" অনুসরন ।তাঁদের আদর্শ গ্রহণই হচ্ছে কুরআন এবংসুন্নাহের অনুসরন। আর তাঁদের অনুসারীগণই হচ্ছে নাজাত প্রাপ্ত দল ।হাদীস শরীফে যাদের নামকরণ করা হয়েছে " জামায়াত"(আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত)বলে।
★ইরশাদ হচ্ছেঃ
عن معاوية بن أبى سفيان أنه قام فينا فقال ألا إن من قبلكم من أهل الكتاب افترقوا على ثنتين وسبعين ملة وإن هذه الملة ستفترق على ثلاث و سبعين. ثنتان و سبعون فى النار وواحدة فى الجنة وهى الجماعة
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণীত হলো সায়্যিদুনা রাসুল পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওফাত মুবারকের পরে তাঁর বংশধর ,ছিদ্দীকীন, সাহাবা কিরাম ,আউলিয়া কিরাম এবং শোহাদাগণের পথ অনুসরন হচ্ছে " আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত "অনুসরনের নামান্তর।
উল্লেখ্য যে – ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী (ইঃ324হিঃ) এবং ইমাম আবুল মানছূর আল মাতুরীদী (ইঃ333হিঃ) ইমাম দ্বয়কে " আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াত " এর ইমাম বলা হয়ে থাকে।এর দ্বারা এ উদ্দেশ্য নয় যে, তাঁদের পূর্বে আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অস্তিত্ব ছিলনা।বরং সাহাবা কিরাম,তাবেয়ীন এবং তাবে তাবেয়ীন হচ্ছেন এই নামের অধিক উপযুক্ত।
উল্লেখিত ইমামদ্বয়কে " আহলুস্ সুন্নাত ওয়াল জামায়াত " এর ইমাম বলার কারণ হচ্ছে – 35 হিজরী সনে হযরত উসমান(রাঃ)এর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে খারিজী ফিত্নার দানা বেঁধে উঠতে আরম্ভ করে।37 হিজরী সনে ছিফ্ফীনের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে সে ফিতনার সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ ঘটে। তারপর ক্রমান্বয়ে " মুর্যিয়া " " জাবরিয়া " ফেরকারও সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তীতে বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম হাসান বাসরী (রাঃ)(ইঃ110 হিঃ) এর দরবারে কতিপয় বিদয়াতী মহান আল্লাহ পাকের জন্য জিসম (শরীর)সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা চালায় । তাই তিনি তাদেরকে মজলিসের এক পাশে তাঁড়িয়ে দেন ।পরে তারা " হাশাভীয়্যাহ" ফেরকা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে । ইমাম হাসান বাসরী (রাঃ) এর সাথে তাঁর ছাত্র ওয়াছেল বিন আতা (ইঃ131 হিঃ) অবাধ্যতা করে ভ্রান্ত মতবাদ গ্রহন করে। তিনি তাকেও তাঁর মজলিস থেকে তাঁড়িয়ে দেন ।পরবর্তীতে "মুতাজিলা "ফেরকা হিসাবে তারা পরিচিতি লাভ করে ।এভাবে ক্রমান্বয়ে ইসলামের ভিতরে বিভিন্ন বাতিল ফেরকার অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে। আগমন ঘটে ইমাম আবুল হাসান আশয়ারী(রাঃ)এর।তিনি সকল বাতিল ফেরকার ভ্রান্ত মতবাদ খন্ডন করে সঠিক মতাদর্শের উপর পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহের আলোকে বিভিন্ন কিতাব রচনা করেন ।তার সমসাময়িক ইমাম আবুল মানছুর আল মাতুরীদী(রাঃ)ও অনূরুপ খিদমতের আঞ্জাম দেন। চলবে.....
আরও পড়ুন:
No comments:
Post a Comment