হুযুর কেবলা

হুযুর কেবলা

পীর না ধরিয়া কি কেহ রুহানিয়ৎ হাসিল করিতে পারে? আমরাও এই উক্তিতে বিশ্বাসী। আধ্যাতিক জ্ঞান বা ঈশ্বরকে আপন করে পাওয়ার লক্ষ্যেই শায়েখ দরকার। আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, ভূতপূর্বকাল হতে আমাদের পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে যেসব আধ্যাতিক গুণীদের নাম শুনে আসছি তারা সবাই সত্যের ওপরই প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাদের ধারাবাহিকতায়-ই আমাদের এই বাংলার জমিনে ইসলামের আগমন ঘটে। যাবতীয় কুসংস্কার ও অলিক ধারনার  মূলৌৎপাটন করে সবাইকে একেশ্বরে বিশ্বাসী করে তোলেন। কিন্তু সমস্যা হলো: তারা যখন গত হলেন তখন তাদের কিছু অতিভক্ত মুরিদ এবং কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ তাদের সমাধিকে পূজার পাশাপাশি আয় রোজকারের ক্ষেত্র বানিয়ে ফেলে। অধিকাংশ মাজারেই দেখা যায় যে মানুষ গিয়ে সিজদা করে, মাজারের মাটি নিয়ে আসে রোগের শিফা ভেবে, আগড়বাতি ও ধুপ জ্বালে, পানি পড়া আনে, মাজারের দানবক্সে টাকা ফেলে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার জানতে খুব ইচ্ছে হয়- ভাউ! আল্লাহর ওলী ত গত হয়ে মাজারে শায়িত আছেন’ পানি পড়া কে দিচ্ছে? মাজারের দানবক্সের টাকায় কি করেন?  মাজারের মাটি শিফার উদ্দেশ্যে নেয়া এটাতো হিন্দুয়ানী প্রথা! কিন্তু আমরা তো মুসলিম। ধুপ- আগরবাতি বনাব আগুন জ্বেলে আমরা কি প্রমাণ করার চেষ্টা করছি? এটাই কি যে,
আমরা আমাদের নাড়ীর টান এখনো ছাড়তে পারছি না! পরিপূর্ণভাবে মুসলিম হতে পারিনি। 

 আবার কিছু অতিভক্ত মুরিদ আছে যারা বলে: বাবা তো মারা জাননি! তিনি শুধু স্থান ত্যাগ করেছেন। অথচ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।[1]  তিনি তার বন্ধুকে সম্বোধন করে বলেন: নিশ্চয়ই তোমারও মৃত্যু হবে এবং তাদের মৃত্যু হবে।[২]  জিন্দা অলী ... ইত্যাদি কথা তো তবে স্বয়ং খোদার কথার খেলাপ! কিছু দরবারের মুরিদ তো মহান আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে বিতর্ক করে, এত আবেগ কেন আপনাদের? আল্লাহ আমাদেরকে আকল নামক একটি জিনিস দিয়েছেন, সুতরাং কোন কথা বলার পূর্বে ভাবুন কি বলছেন। খোদাকে পাওয়ার জন্য বাবার দরবারে গেলেন আর বাবার ইশকের টানে বাবাকে সিজদা করে শিরক করে বসলেন! আমি ত বলবো: আাপনাদের মত জঘন্য মানবের তরে পীর নাই, পীরের কাছে যাওয়া আপনাদের অনুচিত। মাজারে যিনি শায়িত আছেন তিনি সত্যের ওপরই ছিলেন, কিন্তু আপনারা নয়। 

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিনোদন দেখি চারপাশে। পীরের দরবারে গিয়ে তার পায়ের আঙ্গুল চুষে কতেক, নাচে, কাওয়ালী গায়, বাদ্য বাজায়। আরও আছে এমন দৃশ্য যা শালীন ভাষায়ও প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাহলে বলবেন আমি শুদ্ধ ভাষায় অশুদ্ধ কথা বলছি। এগুলো নাকি মারেফতের কাজ; আমার তো মনে হয় এটা মা’রেফত নয় বরং মারে পথ ( খোদাকে পাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়)। ইসলামে এগুলো হারাম এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আল্লাহর রাসুল (দ.) কখনো কোন মহিলার হাত ধরে বায়াত করেননি! অথচ আজকাল অহরহ দেখা যাচ্ছে এর বিপরীত। যাদের ন্যূনতম কমসসেন্স রয়েছে তারা এদেরকে কি বলবেন? পীর হলেন নবীর আদর্শের অনুসারী। সুতরাং তাঁর মহান আদর্শের বাহিরে যেসব লোক পীর দাবী করেন, তাদের আইনত শাস্তি হওয়া দরকার; জেল-জরিমান দুটোই।

কিন্তু সমাজে এখনো অনেক সৎ ও আল্লাহর হুকুমমান্যকারী পীরে কামেল আছেন। যারা আল্লাহর রাসুল (দ.) ও তাঁর সাহাবীদের সুন্নতকে আঁকড়িয়ে আছেন। তাদেরকে বাবা বলে ডাকতে হয় না, অঢেল হাদিয়া দিতে হয়না, তাদের চরণে সিজদাও করা চলে না। তাদের পূর্বপুরুষ কামেল অলীদের মাজারে কাউকে সিজদা করতে বলেন না। মাজারের মাটিও নিয়ে যেতে দেয় না। আগড়-ধুপ ইত্যাদি জ্বলে না তাদের খানকায় বা মাজারে। আল্লাহর তাদেরকে এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরকে সিরাতুল মুস্তাকিমের ওপর কায়েম রেখেছেন। কোন রকম স্বার্থ ছাড়াই তারা মানুষদেরকে আল্লাহর পথে আহবান করেন। এবং অন্য পীরের গীবতও তারা করেন না। তাদের সংস্পর্শে আসার পর রুহানিয়ৎ পাওয়া যায়। তাদেরকে দেখলেই আল্লাহর স্মরণ আসে।

by Md. Habibur Rahman

আরও পড়ুন: 




[১] সুরা আম্বিয়া : ৩৫।
[২]সুরা যুমার : ৩০।

No comments:

Post a Comment